জগন্নাথ কলেজ থেকে ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত এ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা। দীর্ঘ এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়েছে ১৪টি ব্যাচ। আর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছে ৮ থেকে ৯টি ব্যাচ।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সেখানে শিক্ষক হিসেবে নাম মাত্রই নিয়োগ পাচ্ছে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ৩২ শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষকের প্রায় ৫ শতাংশেরও কম। সেখানে নিয়োগ পাচ্ছেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৬৫৪ জন। এদের মধ্যে জবির সাবেক শিক্ষার্থী আছেন মাত্র ৩২ জন। এদের মধ্যে-উদ্ভিদ বিজ্ঞানে একজন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে একজন, মনোবিজ্ঞানে একজন, অর্থনীতিতে দুইজন, গণিতে ৫ জন, কম্পিউটার সাইন্সে দুইজন, পদার্থ বিজ্ঞানে দুইজন, রসায়নে একজন, আইন বিভাগে একজন, ইসলামিক স্টাডিজে একজন, ইংরেজিতে একজন, সমাজবিজ্ঞানে তিনজন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় একজন, দর্শন একজন, মার্কেটিং বিভাগে দুইজন, ফিনান্স বিভাগে দুইজন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগে তিনজন,একাউন্টিং বিভাগে একজন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগে একজন জবির সাবেক শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকের মধ্যে বর্তমান উপাচার্যের সময় নিয়োগ পেয়েছেন ২৯ জন। এছাড়া বেশকিছু পুরানো বিভাগে অদৃশ্য কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে-প্রাণীবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, ইসলামের ইতিহাস, বাংলা, ইতিহাস বিভাগ। যদিও এসব বিভাগ থেকে বেশকিছু শিক্ষার্থী বাইরের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, জবি থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও নিজ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন না। অপরদিকে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাক বেঞ্চাররাও শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন। স্বর্ণপদক জয়ীদের বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, বিশেষ একটি অঞ্চল বা বিশেষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হওয়ায় আমরা নিয়োগে বঞ্চিত হয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের সব ধরণের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ইচ্ছা ছিল জবিতে থেকে যাব কিন্তু এখন আর এখানে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। একজন ছাত্র যদি সেই অনুষদের সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে না পারে তবে এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে।’
জানা যায়, ২০১৪ সালের জবির ১০ শিক্ষার্থী ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পেলেও শুধুমাত্র মার্কেটিং বিভাগের মেহজাবীন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বাকিদের কেউই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি।
এ ব্যাপারে জবির লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েল যে বয়স তাতে এখন থেকে সব শিক্ষক নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই পাওয়া উচিত।
ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. শওকত জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা যদি আমাদের নিজস্ব প্রডাক্ট ব্যবহার না করি কবে অন্যরা মনে করবে আমাদের প্রডাক্টে নিজেদের ভরসা নেই। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে।
জবির অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং নারায়গঞ্জ-২ এর এমপি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। সেখানে জবিতে কেন ব্যতিক্রম হবে। আমাদের পক্ষ থেকে জোর দাবি যেন শত ভাগ নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা পায়।
জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, তাদের কেন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না এটা নিজ নিজ বিভাগই ভালো বলতে পারবে। তবে আমি মনে করি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া উচিৎ।
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নতুন। আমরা এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। এটা নির্ভর করে শিক্ষকদের মানের উপর। এখন ধীরে ধীরে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মান বাড়ছে। ভবিষ্যতে এটা আরো বাড়বে। তখন বেশি করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন