আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার চূড়ান্ত প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই সভা হয়।
সভা শেষে সাদা দলের শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সাদা দলের কোনো অংশগ্রহণ নেই। সেটা একতরফা হয়েছে। আমরাও এই নির্বাচন পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে চাই। পাশাপাশি সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ দেখতে চাই। নির্বাচন অর্থবহ করা এবং সর্বোপরি ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় আমাদেরকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান, রিটার্নিং অফিসারগণ, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
জানা গেছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে চলতি সপ্তাহেই। বেশির ভাগ সংগঠনের পক্ষ থেকে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানালেও ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হচ্ছে হলেই। আর নির্বাচন হবে নির্ধারিত তারিখেই। ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। এরআগে গত ২৯ জানুয়ারি ডাকসুর গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত স্নাতকোত্তর শেষে একাধিক স্নাতকোত্তর বা সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর কোর্সে অথবা এমফিলে অধ্যয়নরত ৩০ বছরের মধ্যে থাকা যেকোনো শিক্ষার্থী এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে যারা ঢাবিতে স্নাতক করেননি, তারা সেই সুযোগ পাবেন না।
নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আবাসিক হলে করার সিদ্ধান্তও নেয় সিন্ডিকেট। তবে ডাকসুর সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক কোটা সংস্কার আন্দোলকারীরাও গত সোমবার এই দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
ভোটকেন্দ্রের ব্যাপারে প্রশাসনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভিসি মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ভোটকেন্দ্র হলে করার কথা আছে। সিন্ডিকেটেও একই সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।
প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, নির্ধারিত ১১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। সাত দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটের, এটি আমাদের হাতে নেই। আগের নির্বাচনগুলোতে ভোটকেন্দ্র হলেই হয়েছে। তবে অনেক সংগঠন যেহেতু ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করার দাবি জানাচ্ছে, এতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে।
ভিসির সাথে ঢাবি সাদা দলের সাক্ষাৎ
এদিকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু দাবি জানিয়েছে ঢাবি সাদা দল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভিসির কার্যালয়ে সাদা দলের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ সাক্ষাত করেন। এ সময় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক মো: হাসানুজ্জামান, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, ড. মো: গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক নূরুল আমিন, ইসরাফিল রতন প্রামাণিক প্রমুখ।
সাক্ষাৎ শেষে অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সহাবস্থান নেই। বৈধ ছাত্র হওয়া স্বত্ত্বেও বিরোধী ছাত্রসংগঠন করার কারণে অনেকে মারধরের শিকার হচ্ছে। তারা ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির প্রতি একমত পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করা, হলের বাইরে বিভাগগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থীরা ভোটার হতে পারবে; এই ঘোষণা আগেই দিতে পারতো। এমফিলের ভর্তির নির্ধারিত সময় শেষ হলেও শুধু নির্বাচনে বিশেষ কাউকে সুবিধা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে ভর্তির সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ভোটার ও প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ করাটা অযৌক্তিক। এভাবে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন