চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে ২৪ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। কিন্তু সোমবার রাতে কমিটির তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর তা মেনে নিতে না পেরে মঙ্গলবার দিনভর ক্যাম্পাসে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের একাংশ। তাদের দাবি, ২৪ জনের কমিটিতে পাঁচজনই শিবির ও ছাত্রদলের নেতা।
বিক্ষোভকারীদের শঙ্কা, এর ফলে ক্যাম্পাসটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। অথচ ২০১৫ সালে শিবিরের সাথে সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তার করে ছাত্রলীগ। আর এ কারণেই রক্তঝড়া এই ক্যাম্পাসটি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে গত সোমবার দিনগত রাতে কমিটির তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, বিষয়টি মহানগর ছাত্রলীগের সেক্রেটারি তদন্ত করছেন। কেউ ১০ বছর আগে হয়তো শিবির করতো, এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারন করে ছাত্রলীগ করছে। এটি করতেই পারে। সন্দেহ বা সংশয়ের কারণ নেই। ছাত্রলীগ সকল ছাত্রদের জন্য উম্মুক্ত। কেউ সংগঠনে আসতে চাইলে তাকে বাধা দেয়ার সুযোগ আমার-আপনার কারো নেই।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া খাদেমুল ইসলাম দুর্জয়কে শিবির নেতা হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর। নতুন কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক আবু নাঈম হাসানও কলেজে শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এ ছাড়া নুতন কমিটির সহ-সভাপতি খালেদ মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রিফাত হোসেন ছিলেন কক্সবাজারের পেকুয়া কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি। যুগ্ম-সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এক সময় শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পাদক তারেকুল ইসলাম খান এই কলেজেরই ছাত্র নন।
কমিটি নিয়ে এসব বিতর্কের বিষয়ে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, কমিটিতে শিবির বা ছাত্রদলের সাবেক নেতা থাকার কোনো প্রমাণ থাকলে আমরা যাচাই-বাছাই করে বাদ দেব। এটা নিয়ে মাঠ গরম করার কিছু নেই। যারা ঠুনকো অজুহাতে জ্বালাও-পোড়াও করে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করছে, আমরা তাদের বিষয়টি ভেবে দেখব।
এদিকে, টাকা নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমুর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে নতুন কমিটির পাঁচজন কমিটি গোষণার পর পরই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে ছাত্রলীগের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। নতুন এই কমিটি ঘোষণার পর তা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। মেয়র নাছির গ্রুপ, সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন গ্রুপ এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সমর্থিত টিনু গ্রুপ থেকে নিয়ে ২৪ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়।
প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও টিনু গ্রুপ সমর্থিত সুভাষ মলিøক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি অনুমোদন দেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হাসান ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর চৌধুরী।
কমিটিতে কমর উদ্দিন, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী টুটুল, মনিরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, মো. ওবায়েদুল হক, মোস্তফা কামাল, জাবেদুল ইসলাম জিতু, মোক্তার হোসেন রাজু ও শাজাহান সম্রাট এই নয়জনকে সহ-সভাপতি করা হয়।
যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়েছে সাদ্দাম হোসেন চৌধুরী, ইউসুফ কবির, স্বরূপ রায় সৌরভ ও উথিলা মারমাকে।
সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন খাদেমুল ইসলাম দুর্জয়, হায়দার আলী, মোহাম্মদ বেলাল ও আনন্দ মজুমদার।
এ ছাড়া দপ্তর সম্পাদক হিসেবে আবদুল কাদের হাওলাদার, প্রচার সম্পাদক জামাল উদ্দিন সোহেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আবু নাঈম মো. হাসান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক তারেকুল ইসলাম খান, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক খন্দকার নায়েবুল আজম এবং উপ শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রিফাত হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর শিবিরের সাথে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম কলেজে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। সেই সময় কলেজ ক্যাম্পাসে বসানো হয় পুলিশ ফাঁড়ি, বন্ধ করে দেয়া হয় চারদিকের গেট। সেই ক্যাম্পাস দখলের কৌশল হিসেবে কমিটিতে জায়গা নিয়েছেন শিবির ও ছাত্রদলের নেতারা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন