ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০১৭-১৮ বছরের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসম্পাদক মহিউদ্দিন রানা। সাবেক একজন প্রক্টরের ভাষায় তিনি ‘ডিজিটাল জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ড’। সেই রানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব না থাকলেও বহাল তবিয়তে হলে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ শুক্রবার থেকে বাণিজ্যভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভর্তিযুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। ঠিক এই সময়ে এমন একজন ‘জালিয়াতের’ হলে অবস্থানকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্ররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের এক নেতার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে রানা হলে অবস্থান করার সুযোগ পাচ্ছেন।
হলের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্র মহিউদ্দিন রানা ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রধান ভবনের ২২৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় প্রচারবিষয়ক উপসম্পাদক আবদুল ফাত্তাহ তুহিনের ছত্রছায়ায় তিনি হলে থাকছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
যদিও অভিযোগের বিষয়ে আবদুল ফাত্তাহ তুহিন বলেন, ‘আমি হলে রাখছি এ রকম না। সে (রানা) আমার সঙ্গে রাজনীতি করত। তাই মাঝেমধ্যে আমার সঙ্গে থাকে। কোনো সমস্যা?’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত এবং জালিয়াতির ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া একজন ব্যক্তিকে কীভাবে হলে রাখেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের প্রচারবিষয়ক উপসম্পাদক বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল। যার কারণে আমার কাছে এলে চলে যেতে বলতে পারি না। এর বাইরে কিছু নয়।’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, রানাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। আবার কারা যেন তাঁকে হলে তুলেছে। তাঁকে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি।
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২০ অক্টোবর সম্মিলিত ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার আগের রাতে পুলিশ মহিউদ্দিন রানাকে ভর্তি জালিয়াতির ডিভাইসসহ আটক করে। ওই সময় তাঁর সঙ্গে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আবদুল্লাহ আল মামুনকেও আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ডিভাইসসহ আটককৃতরা ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ড। মহিউদ্দিন রানাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কিন্তু জামিনে বের হয়ে এসে রানা আবারও হলে ওঠে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন রানা বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যে হলে যেতাম। তবে সব সময় থাকতাম না। কেননা আমার তো ছাত্রত্ব নেই।’
মহিউদ্দিন রানার হলে থাকার বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ন আখতার বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি তথ্য নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আমরা রানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন