দেশে এখনো প্রায় ২০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে। সচেতনতা ও যথাসময়ে চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন দেশে প্রায় ১০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু ঘটছে।গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। আয়োজনে ছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।
জাহিদ মালেক বলেন, যক্ষ্মার ওষুধ এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রোগের চিকিৎসা, ওষুধসহ সব কিছু বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারের একার পক্ষে এই সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সবাই এগিয়ে এলে ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল সম্ভব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষের শরীরে টিবি বা যক্ষ্মা আছে। এই রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ১৫ কোটি মানুষ মারা যায়। যেখানে দারিদ্র্য বেশি, সেখানে যক্ষ্মার হারও বেশি। আমাদের দেশে যক্ষ্মা শনাক্তের হার প্রায় ৮০ শতাংশ। এখনো প্রায় ১৯ থেকে ২০ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্বের ৭০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগীর বসবাস মাত্র ৮-১০টি দেশে। সেই তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আশার দিক হলো, অতীতের চেয়ে যক্ষ্মা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ২০০২ সালে যেখানে বছরে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যেত, এখন সেটা কমে ৪০ হাজারে নেমেছে।’
দেশের বর্তমান যক্ষ্মা পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর, টিবি-এল ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার।
তিনি বলেন, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও সহযোগী সংস্থাগুলো গত কয়েক দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০১৫ সালে যেখানে প্রতি এক লাখে প্রায় ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হতো, সেখানে ২০২১ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যু প্রতি লাখে ২৫ জনে নেমে এসেছে।
মো. মাহফুজার রহমান সরকার আরো বলেন, বাংলাদেশ এখনো যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি, যেখানে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২১ সালে প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং ৪২ হাজার মারা যায়। অর্থাৎ প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) অধ্যাপক ডা. কাজী শফিকুল হালিম বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মার সংক্রমণ ৯৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শনাক্তকরণ, নোটিফিকেশনের হার বাড়ানো, সবার জন্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
দেশে যক্ষ্মা নির্মূলে চিকিৎসকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা নির্মূলে বাংলাদেশের আরো অনেক কিছু করতে হবে। এই রোগ নিয়ে গবেষণায় চিকিৎসকদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মু. আনোয়ার হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলামসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন