স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রোগ। জনগণ সচেতন থাকায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ স্ট্রোক হার্টের রোগ মনে করে থাাকেন। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা পেতে দেরি হয়।
স্ট্রোক হওয়ার কারণ : আমাদের মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলোর জটিলতায় এ রোগ হয়। রক্তনালিতে কখনো রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হয় এবং ব্রেইনের একটা অংশের সক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার পরে আমাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রক্তনালির কোনো অংশ কোনো কারণে ছিঁড়ে রক্তক্ষরণের কারণে ব্রেইনের একটি অংশ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে স্ট্রোক একটি মারাত্মক রোগ। স্ট্রোক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টুকু কাজে লাগানো সম্ভব হলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি ঠেকানো সম্ভব। তবে সময়টুকু নির্ভর করে রোগীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর। অনেকের তিন ঘণ্টায় যে ক্ষতি হয়, অন্যের ক্ষেত্রে আরও পরে গিয়ে হতে পারে।
advertisement
সাধারণত স্ট্রোকের রোগী সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে এলে আইভি থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় ইনজেকশনের মাধ্যমে এমন একটা ওষুধ দেওয়া হয়, যা রক্তনালির ব্লক ছুটিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে। ওষুধ দেওয়ার এ পদ্ধতির নামই থ্রম্বোলাইসিস।
স্ট্রোক বোঝার উপায় : সহজ ভাষায় বলি, বি ফাস্ট। অর্থাৎ বি মানে ব্যালেন্স। ব্যালেন্স মানে ভারসাম্য। যখন হঠাৎ করে ভারসাম্যহীন হবেন অথবা ই মানে আই অর্থাৎ হঠাৎ করে ব্লাইন্ডনেস হয় কেউ। এফ মানে ফেইস। ফেইসের একটি অংশ যদি অ্যাসিমেট্রি হয় অথবা একটা অংশ দুর্বল হয়। এ মানে আর্ম। আর্ম অথবা হাত যদি কখনো দুর্বল হয়ে যায় অথবা পা যদি দুর্বল হয়ে যায়। হঠাৎ করে হয় তখন আমরা বলি স্ট্রোক হয়েছে। এস মানে স্পিচ। হঠাৎ করে যদি কারোর কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় অথবা স্লারিং অব স্পিচ অথবা জড়তা হয়, কথায় হঠাৎ করে তখন সেটাকে আমরা বলি যে স্ট্রোক হয়েছে। টি মানে টাইম। টাইম ইজ ভেরি মাচ ইমপর্টেন্ট। টাইম ভেরি মাচ ইমপর্টেন্ট। কারণ তাড়াতাড়ি ডক্টরের কাছে যেতে হয় অথবা হসপিটালে যেতে হয়।
প্রাথমিক করণীয় : স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে এক মিনিটে বাইশ লক্ষ নিউরন মারা যায়। এ জন্য বলি, স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর প্রতিটি সেকেন্ডই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সময় ব্যয় না করে যখনই মনে করব স্ট্রোক হয়েছে, তখনই হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করব। অনেক সময় রোগী সিভিয়ার ভমিটিং নিয়ে আসে। সিভিয়ার হ্যাডএইক নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে যদি সাডেন অকারেন্স হয়, স্ট্রোক মনে করি, আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাব। এ স্ট্রোক থেকে আরও দুটো জিনিস বোঝা যায়Ñ স্ট্রোক ইজ আ প্রিভেন্টেবল ডিজিজ এন্ড স্ট্রোক ইজ আ ট্রিটাবল ডিজিজ। স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। যথাসময়ে চিকিৎসা করলে রোগী ভালো হয়। তাহলে স্ট্রোক যেহেতু প্রতিরোধ করা যায়, প্রিভেন্টেবল করা যায়, আমাদের ওই জিনিসগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, স্ট্রোক কী কী করলে প্রিভেন্ট করতে পারি।
লেখক : অধ্যাপক; ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস ও হাসপাতাল
চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি.
শ্যামলী শাখা, ঢাকা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন