পুরুষের মধ্যে প্রোস্টেট গ্রন্থির ক্যানসার হওয়ার হার বেশি। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে পুরুষ এ ক্যানসারের ঝুঁকিতে পড়েন। কিছু বিষয়ে সাবধানতা ও সচেতন হলে এ ক্যানসার থেকে মুক্ত থাকা যায়।
প্রোস্টেট বলতে যা বোঝায় : শুধু পুরুষেরই প্রোস্টেট গ্রন্থি আছে। এর আকার কিছুটা কাজু-বাদামের সমান। মূত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মুত্রনালি বের হয়েছে, সেটির চারপাশজুড়ে এ গ্রন্থি বিদ্যমান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র ও বীর্য প্রবাহিত হয়। এ গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের জন্য কিছু তরল পদার্থ তৈরি করা। যৌনকর্মের সময় যে বীর্য স্খলিত হয়, সেটি আসলে শুক্রাণু এবং এ তরল পদার্থের মিশ্রণ।
প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণ : পুরুষের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যানসার খুবই সাধারণ। এ গ্রন্থির মধ্যে কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে শুরু করে, তখনই ক্যানসার হতে পারে। বয়স যত বাড়তে থাকে, প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তত বেড়ে যায়। পরিবারের কারো যদি (ভাই, বাবার) প্রস্টেট ক্যানসার থাকে, তাহলেও ঝুঁকির আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেকখানি।
প্রোস্টেট ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় এখনো সম্ভব হয়নি। তবে কতকগুলো বিষয় লক্ষ করা গেছে, যেগুলো প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো বিপদের কারণ হিসেবে মনে করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বয়স যত বেশি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি তত বেশি। প্রোস্টেট ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস। প্রোস্টেট ক্যানসারের কিছু জেনেটিক কারণও আজকাল আলোচিত হচ্ছে। প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ ও এ রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করা। খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত চর্বি ও আমিষ খাবারের সংযোজন। সিগারেট, তামাক সেবন। পুরুষ হরমোন (টেস্টোস্টেরনের) উপস্থিতি প্রোস্টেট ক্যানসার দ্রুত বৃদ্ধি ও বিস্তারে সাহায্য করে থাকে। প্রোস্টেট ক্যানসার হলে আগে যেসব লক্ষণ বলা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলোÑ পিঠের নিচের দিকে ব্যথা। লিঙ্গোত্থানে সমস্যা। নিতম্ব বা তার আশপাশে নতুন করে ব্যথা দেখা দেওয়া। বীর্য বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। কিন্তু এটা খুবই কম দেখা যায়।
ক্যানসার পরীক্ষার জন্য সবগুলো উপসর্গের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কারণ বেশিরভাগ সময়েই প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। প্রোস্টেট খুব ছোট একটা অঙ্গ হওয়ায় খুব বড় কোনো ধরনের লক্ষণ বুঝতে পারা যায় না। তাই ওপরের উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক যদি দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করা উচিত।
প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ : কোনো কারণে যদি প্রোস্টেট বড় হয়ে যায়, তাহলে মূত্রনালির মুখ সংকুচিত হয়ে আসে। ফলে মূত্র বের হতে সমস্যা হয়। সাধারণত প্রোস্টেটর তিন ধরনের সমস্যা দেখা যায় তা হলো সাধারণ প্রসারণ, প্রোস্টেটের প্রদাহ (একে প্রস্টাইটিসও বলে) এবং প্রোস্টেট ক্যানসার। এই সবগুলোর ক্ষেত্রেই সাধারণত একই রকম লক্ষণ দেখা যায়। যেমন- ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে রাতের বেলায়। প্রস্রাবের প্রচ- বেগ পাওয়া, এমনকি মাঝেমধ্যে বাথরুমে যাওয়ার আগেই প্রস্রাব করে ফেলা। প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া। প্রস্রাব করতে প্রচুর সময় লাগে। প্রস্রাবে বেগ থাকে না। প্রস্রাব করার পরও মূত্রথলিতে প্রস্রাব রয়েছে এমন অনুভূত হওয়া। এছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ মাঝে মধ্যে দেখা যায়। যেমনÑ প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা হওয়া। বীর্যপাতের সময় যন্ত্রণা হওয়া। অ-কোষে ব্যথা। এ লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক যদি আপনার মধ্যে দেখা যায়, দেরি না করে সতর্ক হোন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ থাকুন।
লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ও প্রধান, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সাভার, ঢাকা
চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট
(দ্বিতীয় তলা), ঢাকা
০১৯১৫৭২৮২৬৬, ০১৭৪৫৩৪৯৪১৫
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন