পৃথিবীতে ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। এটি সাধারণ সংক্রমণ। ফাঙ্গি নামক এক ধরনের জীবাণু এ সংক্রমণ ঘটায়। খুব সাধারণ ছত্রাক সংক্রমণগুলো হলোÑ অ্যাথলেটস ফুট, ওড়াল থ্রাশ, জক ইচ, রিঙ ওয়ার্ম, টিয়েনা ভেরসিকালার। এ সময় যে কয়েকটি চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি পীড়া দিয়ে থাকে, তার মধ্যে ঘামাচির পরই পানিবাহিত ও ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। ত্বক ভেজা থাকলে সহজেই ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। বৃষ্টির পানি লাগলে তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ও শরীর ভালোভাবে মুছতে হবে।
ছত্রাকের আক্রমণ : দেহে ছত্রাকের আক্রমণই বর্ষাকালের প্রধান রোগ। চিকিৎসায় এ রোগটি সহজে ভালো হয়। হতাশার দিক হচ্ছে, কিছুদিন যেতে না-যেতেই পুনরায় দেখা দেয়। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটু ভালো হওয়ামাত্র রোগী ওষুধটি বন্ধ করে দেন। আবার যারা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে, তারাও ঠিকমতো ব্যবহার্য কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করে রাখেন না। ফলে খুব সহজেই কাপড়-চোপড় থেকে পুনরায় ছত্রাক দেহে প্রবেশ করে এবং সেই কারণে এ রোগটি কিছুদিনের মধ্যে পুনরায় দেখা দিয়ে থাকে।
প্রকার ভেদ : মূলত তিন ধরনের ছত্রাক রোগ এ সময় হতে পারে। যেমনÑ ১. দাদ ২. ছুলি ও ৩. ক্যানডিডিয়াসিস। এ তিন ধরনের ছত্রাক মূলত ত্বকের বাইরের অংশ আক্রমণ করে এবং সেই আক্রমণ স্যাঁতসেঁতে, নোংরা, ঘর্মাক্ত দেহে সবচেয়ে বেশি হয়। দাদ শরীরের যে কোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। দেখা গেছে, সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পাছা, পিঠ, মাথা, কুচকি ইত্যাদি স্থানে বেশি আক্রান্ত হয়। টিনিয়া ভারসিকলার বা ছুলিও ছত্রাকজনিত রোগ। গরমকালে এ রোগ বেশি হয়, শীতকালে আবার মিলিয়ে যায়। আবার গরম এলে ঘাড়ের চামড়া ভিজে থাকে, যা দেখতে হালকা বাদামি, সাদা গোলাকৃতির মতো দেখা যায়। বুকে, গলার দুপাশে ঘাড়ের পেছনে, পিঠে, বগলের নিচে, এমনকি সারা শরীরে হতে পারে। এতে ত্বক দেখতে সাদা হয়। তাই অনেকেই আবার একে শ্বেতী ভাবতেও শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ছত্রাকজনিত চর্মরোগ : ক্যানডিডিয়াসিসও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। যেমনÑ শিশু-বৃদ্ধ বা রোগাক্রান্ত, ডায়াবেটিস আক্রান্ত, দীর্ঘদিন ধরে যারা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছে বা যাদের ত্বকের ভাঁজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে, তাদেরই এ রোগটি বেশি হয়। যারা সব সময় পানি নড়াচড়া করে, তাদের আঙুলের ফাঁকে, হাতের ভাঁজে, শিশুদের জিহ্বা, নারীর যোনিপথে এবং গর্ভবতীরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে প্রচুর চুলকানি হয়ে থাকে।
মুক্তির উপায় : ছত্রাকের মাধ্যমে সৃষ্ট এ সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেলেও তা আবার হতে পারে। কারণ ত্বকে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেখানে তা বেড়ে উঠতে বারবার চেষ্টা করে। তাই ফাঙ্গাস প্রতিরোধে পা, আঙুলের ফাঁক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ত্বক পরিষ্কার বা ধোয়ার পর শুষ্ক টাওয়েল দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁক, ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথাসহ শরীরের নানা অংশ। কাপড়, বালিশ রোদে শুকিয়ে নিতে হবে ভালো করে। করোনা ও মাঙ্কিপক্স আতঙ্কের মাঝে আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এমনিতেই খুব জরুরি। নইলে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এ ক্ষেত্রে ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। চিকিৎসক এ সময় খাবার-দাবার ব্যাপারেও বিধি-নিষেধ জানিয়ে চিকিৎসা দিতে পারেন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক
চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা
চেম্বার : ডা. জাহেদ’স হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক, সাবামুন টাওয়ার, পান্থপথ, ঢাকা
০১৭০৭০১১২০০; ০১৭৩০৭১৬০৬০
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন