নবজাতকের শরীরে যে সাদা ক্রিমের মতো কিছু একটা তৈলাক্ত পদার্থ দেখা যায়, তার নাম ্ভার্নিক্স ক্যজিওসা। এটি প্রায় সব নবজাতকের শরীরে কমবেশি দেখা যায়। কারও কারও শরীরে এত বেশি দেখা যায়, পুরো শরীর সাদা আবরণে ঢাকা পড়ে যায়। আবার কারও কারও খুবই অল্প। সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করে যে নবজাতক, তার শরীরে ভার্নিক্সের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। যা-ই হোক, ভার্নিক্স সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। শিশুকে এটিসহ অভিভাবকের কাছে দিলে তারা ভাবেন, মনে হয় ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয়নি। কখনো কখনো নিজেরাই মুছতে বসে যান। আসলে ডাক্তাররা যতটা সম্ভব, যতক্ষণ সম্ভব, এটি রেখে দিতে চান। কারণ এটি শিশুর জন্য উপকারী। রয়েছে এর নানা উপকারী দিক। যেমন-
ভার্নিক্সে এক ধরনের তেল বা চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে, যা মায়ের গর্ভে থাকাকালীন তরল (এমনিওটিক ফ্লুইড) পদার্থ থেকে শিশুর ত্বক রক্ষা করে। এটি জন্মদান প্রক্রিয়া সহজ ও সাবলীল করে। জন্মের পর শিশুর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে ভার্নিক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর রয়েছে নানা রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয়। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে এবং পানি বের হয়ে যেতে বাধা দেয়। ফলে নবজাতক দ্রুত ঠা-া হয়ে যায় না এবং শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয় না। জন্মের পর নবজাতককে গরম রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ত্বকের সুষ্ঠু গঠনে এটি প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পরিবেশ তৈরি করে এবং ত্বক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করে। কোনো কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আবার ঠিক করতে ভার্নিক্স সাহায্য করে থাকে। এতে রয়েছে ভিটামিন-ই ও অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শিশুর শরীর অতিবেগুনি রশ্মির মতো খারাপ অক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা করে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ভার্নিক্স ও এর রঙ দেখে ডাক্তাররা শিশুর কিছু রোগ সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারেন। তাই উচিত জন্মের পর পরই শিশুকে পরিষ্কার বা মোছার সময় খেয়াল রাখা, যেন ভার্নিক্স উঠে না যায়। যতক্ষণ রাখা যায়, রেখে দিতে হবে। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) এ মতামত সমর্থন করে।
লেখক : নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২, সেগুনবাগিচা, ঢাকা
০১৬৩৬৬৯২২৯৮
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন