নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিযেশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে। স্পষ্টত:ই তাদের ক্ষোভ স্বাস্থ্য সচিবকে নিয়ে। যদিও প্রকাশ্যে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের, স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এই সংকটের মূল অন্য জায়গায়।
সম্প্রতি, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ১২৯ জনকে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, নীতিমালা অনুযায়ী। অতীতে, এধরনের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় বিএমএ এবং স্বাচিপকে যুক্ত করা হয়। কিন্তু এবার তাদের অন্ধকারে রেখেই এই পদোন্নতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। জানা গেছে, পদোন্নতির সুপারিশ মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হলে, তিনি ৫দিন ফাইল আটকে রাখেন। এসময় তিনি চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একজন চিকিৎসক নেতা, নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বলেছেন ‘মন্ত্রী আমাকে ফোন করে বলেছেন, আপনাদের বাদ দিয়েই সচিব এসব করেছে। আমি কি করবো?’ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সচিবের সঙ্গে মন্ত্রীর দূরত্ব। এক সময় এই দূরত্ব বিরোধে রূপ নেয়। আগে মন্ত্রনালয়ের সব ব্যাপারেই মন্ত্রীর একচ্ছত্র কৃর্তৃত্ব ছিলো। কিন্তু আবদুল মান্নান দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি এলোকেশন অব বিজনেস’ অনুসরন শুরু করেন। যেখানে যতটুক মন্ত্রীর ভূমিকা প্রয়োজন, ততোটুকই সুযোগ তাকে দেয়া হয়। এনিয়ে জনপ্রশাসন সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের কাছেও নালিশ করেন মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড: আহমদ কায়কাউসের মধ্যস্থতায় মন্ত্রী এবং সচিবের বিরোধ মীমাংসা করা হয়। কিন্ত মন্ত্রনালয়ে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব হারিয়ে মন্ত্রী সচিবের সমালোচনা বিভিন্ন মহলে করেছেন বলেও জানা যায়। সচিবের কাছে কোনঠাসা হয়ে পরা মন্ত্রী তাই পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করেন। সচিবের বিরুদ্ধে তাদের উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মন্ত্রী একাধিক পেশাজীবী নেতাকে বলেছেন, বদলী-পদোন্নতি সব সচিব একাই করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবী করেছেন ‘বিএমএ এবং স্বাচিপকে উস্কে দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।’ এখন যখন বিএমএ, স্বাচিপ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে তখন মন্ত্রী নির্বিকার। মন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের প্রধান অভিভাবক। তাই এরকম পরিস্থিতিতে দুপক্ষকে নিয়ে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ তারই নেয়ার কথা। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এখন পর্যন্ত তেমন কিছু করেননি। মজার ব্যাপার হলো, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শুরু থেকেই স্বাচিপ এবং বিএমএর দ্বন্দ্ব ছিলো। মন্ত্রী বিএমএ বা স্বাচিপকে গুরুত্ব দেন না বলে অভিযোগ করতেন চিকিৎসক নেতারা। এখন সেই মন্ত্রীই বিএমএ এবং স্বাচিপের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন