শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিমহা) মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্ধকৃত দেড় কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারার মিশনে নেমেছে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগ ও একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ মিশন সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কাজ শেষ তো দূরের কথা বলতে গেলে কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারদের অনুকুলে বরাদ্ধকৃত অর্থ বা বিলের চেক হস্তান্তরও করা হয়েছে। এখন শেষের দিকের দু একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারলেই নিশ্চিন্ত মনে ভাগবাটোয়ারার কাজটি শেষ করতে পারে তারা। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বরিশাল গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেড়াল্ড অলিবার গুডা।
তবে অনুমোদিত সব কাজ নিয়ম মাফিক সম্পন্ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন এতে অর্থ লোপাটের কোন সুযোগ নেই। এদিকে বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ও দায়িত্বরত উপ সহকারী প্রকৌশলীর ভিন্ন ভিন্ন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান কাজে দূর্নীতির চিত্র অনেকটাই স্পষ্ট।
তথ্য সুত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে জিওবি রাজস্ব বাজেটে শেবাচিম হাসপাতালের সংস্কার ও মেরামত কাজের জন্য ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২৭ ধরনের এ কাজের অনুমোদন প্রদান করে অর্থ ছাড়ের জন্য চলতি বছরে ৯ জানুয়ারি প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মেরামত অধিশাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ শাহদাত খন্দকার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে মোট বরাদ্ধের অর্ধেক (৫০ শতাংশ) টাকা ছাড় করনের নির্দেশনা দেয়া হয়। সাধারণত এই চিঠি ইস্যুর মাস খানেকের মধ্যে বরাদ্ধ কৃত টাকা ছাড় দেয় প্রধান হিসাব রক্ষণ অফিস। নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রনালয় প্রাক্কালিত কাজের অনুমোদন দেয়ার পরপরই দরপত্র আহবানসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে স্ব স্ব নির্বাহী প্রকৌশলী। সে হিসাবে ফেব্রয়ারি মাসের মধ্যে দরপত্র আহবানসহ সকল প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু গত কয়েক দিন আগে তড়িঘড়ি করে শুরু করা হয় এসব কাজ। মূলত অর্থ বছর শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকায় বরাদ্ধকৃত অর্থ ফেরত না দেয়ার কৌশল হিসাবে এবং অর্থ লোপাটের সহজ এ সুযোগ হাত ছাড়া না করতেই শুরু হয় এসব কাজ। আর এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো পার্সেন্টেজ বাগিয়ে নেওয়া। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ দুএকটি ছাড়া নিয়ম নীতির কোন শর্তই মানা হয়নি পুরো প্রক্রিয়ায়। কাজ শেষ করার পূর্বে অর্থ বা বিল প্রদান না করা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানকে কার্যাদেশ ও প্রাক্কালন এর অনুলিপি প্রেরণ নিশ্চিত করা, কাজ সম্পর্কে অনাপত্তি পত্র গ্রহণ এবং কার্য সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রত্যায়ন প্রাপ্তির পর বিল পরিশোধ সহ কোন নিয়মই মানা হয়নি এসব কাজের ক্ষেত্রে।
এমনকি প্রতিটি কাজের দৃশ্যমান স্থানে নূনতম ৩ ফুট দৈর্ঘ্য ও আড়াই ফুট প্রস্থ সাইজের বোর্ডে কাজের নাম অর্থের পরিমাণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও মোবাইল নম্বরসহ সকল তথ্য আবশ্যিকভাবে প্রদর্শন করা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিটি কাজ তদারকি করার নিয়ম পাত্তাই পায়নি কোন ক্ষেত্রে।
জানতে চাইলে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেড়াল্ড অলিবার গুডা বলেন, এ মাসের শুরুর দিকে আমরা অর্থ বরাদ্ধ পেয়েছি। তাই সকল প্রক্রিয়া শেষ করে করোনার এই সংকটের মধ্যেও কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন কাজে সব ধরনের শর্ত পালন করা হয়েছে। তবে সময় সংকট প্রশ্নে অর্থ যাতে ফেরত না যায় সে জন্য সিকিউরিটি স্বরূপ পে-অর্ডার রেখে ঠিকাদারদের অনুকুলে বিল প্রদান করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন আসলে করোনা সংকটে বরাদ্ধ দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে উপর মহলই সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলো। তাই এ কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। কাজের দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী সেলিম প্রথমে ফেব্রয়ারী মাসে কাজ শুরুর কথা বললেও পরক্ষণেই কিছু দিন আগে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, কোন মতে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ করার আগে বিল প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন আমার প্রত্যায়ন ছাড়া বিল প্রদানের নিয়ম নেই। তারপরও নির্বাহী প্রকৌশলী সেটা করে থাকলে সে দায়ভার তার। আমি আমার কাজ সম্পূর্ণ বুঝে পেলেই হলো।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিজ্ঞ ঠিকাদার বলেন, সময় সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে বিল আগে প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কাজে কম বেশি ত্রুটি দেখা যায়। আর দূর্নীতি করার সুযোগটাও বেশি তৈরি হয়। অনেক সময় ওই কাজ অসম্পূর্ণও থেকে যায়। তবে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই কাজে গাফেলতি করছে বলে অনেক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন