ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের নতুন ৮'ম তলা ভবনকে করোনা হাসপাতাল করার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে হাপসাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন।
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি আনিসুর রহমান খান এমন প্রস্তাবের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ময়মনসিংহবাসীর প্রত্যাশা ও চাহিদার প্রেক্ষিতে গত চার বছরে নতুন ভবনে তিল তিল করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত ক্যাথল্যাব, করোনারি কেয়ার ইউনিট, আইসিইউ ও ডায়ালাইসিসসহ আধুনিক প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সেবার ওয়ার্ড ইউনিট। করোনা হাসপাতালে রূপান্তরের সিদ্ধান্তে এসব সেবা ভেঙে পড়বে, ধ্বংসের মুখে যাবে মূল্যবান মেশিনারিজ সামগ্রী।
এ বিষয়ে মমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, একাধিক বিকল্প থাকার পরও নতুন আট তলা ভবনকে কোভিড করার ঘোষণা আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছুই নয়। কোভিড চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের থাকা খাওয়াসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষায় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা উল্লেখ করে হাসপাতাল পরিচালক আরও জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসপাতালের নতুন ভবন ছাড়াও একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে কোভিড প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, এ নিয়ে উদ্বেগের কিছুই নেই। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরীর সূর্যকান্ত (এসকে) হাসপাতাল, সদর উপজেলার পরানগঞ্জ হাসপাতাল, নার্সিং ডরমেটরি ও সিবিএমসিএইচসহ বেসরকারী প্রাইভেট হাসপাতালকে বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে হাসপাতালের নতুন ভবনকে ব্যবহার করা হবে। এই ক্ষেত্রে রোগী ছাড়া আর কিছুই স্থানান্তর করা হবে না বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
সূত্র জানায়, মমেকের নতুন ভবনের বিকল্প হিসেবে একই ক্যাম্পাসে অন্তত ২০০ শয্যার একটি নার্সিং ডরমেটরির নতুন ভবনকে কোভিড হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোভিড প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা এই ডরমেটরি পরিদর্শনও করেছিলেন। এর বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের আওতাধীন সংক্রামক ব্যাধির সূর্যকান্ত ( এসকে) হাসপাতালে ৭০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড ছাড়াও সাত শয্যার আলাদা আইসিইউতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সদরের পরাণগঞ্জ হাসপাতালে ৩০ শয্যা ও মুক্তাগাছার শারীরিক শিক্ষা কলেজে ৫০ শয্যার কোভিড রোগীদের সেবা নিয়ে প্রস্তুতি ছিল স্বাস্থ্য বিভাগের। এতসব বিকল্প থাকার পরও এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে নতুন ভবনের চিকিৎসাসেবা অকার্যকর করতে একটি মহল কলকাটি নাড়ছে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান ভুইয়া জানান, করোনা পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তবে এর আগে বিকল্পের তালিকায় থাকায় কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে কোভিড হিসেবে প্রস্তুত রাখা উচিত।
মমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হিবরুল বারী জানান, নতুন ভবনকে কোভিড করার চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। কারণ নেফ্রোলজি, আইসিইউ, সিসিইউসহ গাইনী ও জেনারেল সার্জারি রোগীদের কী হবে? যদিও জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, রোগীদের ডায়ালাইসিসসহ প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা বাইরের প্রাইভেট ল্যাব সরকারি ফি’ দিয়ে করতে সম্মত আছে।
করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মশিউল আলম জানান, গত ২৮ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতসহ পরিস্থিতি সামাল দিতে রোগীদের সরিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন আট তলা ভবনটিকে কোভিড ডেডিকেটেড করার প্রস্তাব করা হয়।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন