ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন দাবি করে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্ব না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন একজন নারী চিকিৎসক।
বর্তমানে সরকারি একটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই চিকিৎসক তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার। তার স্বামী একজন সরকারি কর্মকর্তা।
হাসপাতাল থেকে ফোনে ওই চিকিৎসক মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের গাইনি বিভাগে একজন রোগীর কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখতে পাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছিলাম, রোগীও চাচ্ছিল এই হাসপাতাল থেকে চলে যেতে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দেয়নি। এই অবস্থায় আমরা কাজ করেছি।”
গত ৮ এপ্রিল সর্বশেষ ডিউটি করার পর ১০ তারিখে তার হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও এরমধ্যে তিনি জ্বর, কাশিতে ভোগা শুরু করেন।
“এর মধ্যে আমাদের বিভাগের ১২ জন ডাক্তার, পাঁচজন নার্সসহ অনেকে নিজ উদ্যোগে কোভিড-১৯ টেস্ট করিয়েছি, সেখানেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। ১২ তারিখে আমার পরীক্ষার প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে।”
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে ইমপালস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ওই চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি হাসপাতাল থেকে আক্রান্ত হয়েছি, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার কোনো খবরতো ন্য়েনি। এমনকি প্রশাসন থেকে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলা হয়েছে, আমার স্বামীর কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছি। প্রকৃতপক্ষে আমি আক্রান্ত হওয়ার পর স্বামীরও টেস্ট করানো হয়েছে, উনি আক্রান্ত নন।
“আমার কোনো দায়িত্ব তারা নিতে রাজি নয় বলেই আমার সঙ্গে তারা এই ধরনের আচরণ করেছে।”
তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমপালস হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার ডাক্তার খাদিজা জুমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন, আমরা কী করতে পারি? আমাদের অন্যান্য ডাক্তাররা যোগাযোগ রাখছেন।”
হাসপাতালের প্রশাসন থেকে তার সম্পর্কে ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ফেইসবুকে অ্যাডমিনের স্ট্যাটাস দেখেছি, তিনি হাসপাতালের অবস্থাটা তুলে ধরেছেন। আর আমাদের ইমপালস হাসপাতালে একজনও করোনাভাইরাসের রোগী আসেনি। তাহলে কীভাবে তিনি হাসপাতাল থেকে আক্রান্ত হয়েছেন, বলেন?”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ওই চিকিৎসক বলেন, “আমরা রোগীদের সেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কোনো কিছু হলে ডাক্তারদের দোষ দেয় সবাই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করে সেটা কেউ বলে না। আজকে আমি নিজে আক্রান্ত হয়ে তা অনেকটা বুঝতে পারছি।”
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইমপালস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কয়েকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে ঢাকার আরেক বেসরকারি হাসপাতাল আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের আইসিইউতে একজন নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী মারা যান। ওই হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সুরক্ষা উপকরণ দেওয়ার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তিনজন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন