আমরা যখন কোনও জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত হই, হোক সেটা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সেটার বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয় আমাদের শরীরে। প্রথমে তৈরি হয় IgM এরপর তৈরি হয় IgG. এটি দীর্ঘদিন কার্যকর থাকে আমাদের শরীরে। ফলে নতুনভাবে একই জাতীয় বা সম জাতীয় জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি কিছুটা কম থাকে।
আরেকভাবে আমরা প্রতিরক্ষা পেতে পারি তা হল ভেকসিন। এটি বলতে গেলে আজন্ম কাজ করে। সুনির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে যে ভেকসিন প্রয়োগ করা হয় তা সারাজীবন প্রতিরক্ষা দিয়ে থাকে।
করোনা পরিবারের প্রথম ভাইরাস যেটি আমাদেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছিল তা হল SARS. যখন এটির প্রাদুর্ভাব হয় তখন অনেকেরই জটিল আকার ধারন করে, আবার অনেকেই সুস্থতা অর্জন করেন। যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন সেই এন্টিবডি প্রায় দশ বছর তাদের শরীরে কার্যক্ষম ছিল। আবার দ্বিতীয় সদস্য ছিল MERS যাতে আক্রান্তদের শরীরে তৈরি এন্টিবডি প্রায় ৩ বছর কার্যক্ষম ছিল। মানে একই পরিবারের হলেও এন্টিবডির মাত্রা ভিন্নতা দেখা গিয়েছে।
একই পরিবারের নতুন ভাইরাস SARS-Cov 2019 এ যারা আক্রান্ত হয়ে সুস্থতা অর্জন করেছেন তাদের অনেকেই আবার আক্রান্ত হয়েছেন। মানে এন্টিবডি তৈরি হলেও নতুনভাবে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে মূল বিষয় হলো, একবার এন্টিবডি তৈরি হলে পরবর্তীতে আবার আক্রান্ত হলেও ক্ষতির মাত্রা কমে যায়। এটা আশাব্যাঞ্জক খবর।
শিশুরা কেন কম ঝুঁকিতে?
শিশুরা কেন এই ভয়াল রোগে কম আক্রান্ত হচ্ছে সেটি নিয়ে গবেষণা চলছে। হয়ত আমরা সামনের দিনগুলিতে পরিষ্কারভাবে সেটি জানতে পারবো। তবে বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন, বাচ্চাদের যেসকল টিকা দেওয়া হয় তাতে তাদের শরীরে বেশ কয়েক ধরনের প্রতিরক্ষা তৈরি হয়। করোনায় আক্রান্ত না হলেও শ্বাসনালীর ক্ষতি করতে পারে এমন ভাইরাসের টিকা তারা পেয়ে থাকে। ফলে করোনা তে আক্রান্তের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে যায় আবার আক্রান্ত হলেও ক্ষতির মাত্রা মারাত্মকভাবে দেখা দেয় না।
এটিকে সামনে রেখেই নানা প্রস্তাবনার চলছে কিভাবে খারাপ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যায় যেহেতু এখনও ভেকসিন বা ওষুধ বের হয়নি।
গত ২৪ মার্চ FDA একটি পদ্ধতিকে অনুমতি দিয়েছে তা হল যারা সুস্থতা পেয়েছেন মানে যাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে এই কোভিডের বিরুদ্ধে তাদের শরীর থেকে প্লাজমা পৃথক করে খারাপ রোগীদের শরীরে প্রবেশ করা যাতে সেই এন্টিবডি কাজ করে আরোগ্য লাভের রাস্তা সুগম করতে পারে।
এই আমাদের দেশে যে সম্ভব নয় তা কিন্তু নয়। সম্ভব, শুধু প্রয়োজন যথাযথ উপায়ে তার রাস্তা তৈরি করা।
আমাদের আবহাওয়ায় আমরা নানা সময়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই, তাই হয়ত আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য বেশ কিছু দেশের চেয়ে ভালো হতে পারে বিশেষ করে নতুন সৃষ্ট রোগের বেলায়। তাই চিকিৎসার সঠিক পন্থা এখনই বের করে নিতে পারলে তা সবার জন্যই মঙ্গলজনক।
লেখক: ডা. আশরাফুল হক, ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিশেষজ্ঞ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন