রক্তের যখন প্রয়োজন হয় তখন হন্য হয়ে ঘুরে আমরা তা জোগাড় করি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কিছু ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকে বলে ব্যাতিব্যস্ততা থাকে না অনেকটা।
রক্ত যখন আমরা দিতে যাই তখন বেশিরভাগ সেন্টার বিশেষ করে সরকারি কেন্দ্রগুলোতে প্রথমে রক্তের ব্যাগ ভর্তি করে সংগ্রহ করা হয় এবং সেখান থেকে গ্রুপিং ও ক্রসম্যাচিং করা হয়। এটাকে বলে পোস্ট ডোনেশন স্ক্রিনিং।
ব্লাড গ্রুপ এখন আমাদের অনেকেরই জানা থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা জানা হয় বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কার্যক্রম অথবা রাস্তার ধারে খুচরা স্থান থেকে। বলছি না সবই ভুল হয়, তবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয় যেমন সহজ তেমনই কঠিন। কক্ষ তাপমাত্রাও কিন্তু নিয়ামক হিসাবে কাজ করতে পারে ঘটনাচক্রে।
এতো কিছু বলার প্রয়োজন এই কারনে হল যে, গ্রুপিং ও ক্রসম্যাচিং করার পর দেখা গেলো সংগৃহীত রক্ত রোগীকে দেওয়া সম্ভব নয়। তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য আরেকজন ডোনার থেকে রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যে রক্তের ব্যাগটি কাজে লাগছে না সেই রোগীর জন্য তা রক্তদান কেন্দ্রে দিয়ে দেওয়া হয় অন্য রোগীর ব্যবহারের জন্য।
আমাদের মাঝে একটি সাধারণ অভ্যাস প্রচলিত রয়েছে যে, গরম তাজা রক্তই উপকারি, ফ্রিজে সংরক্ষিতটি ততটা কাজের নয়। তাই সেই রক্তের ব্যাগটি পড়ে থাকে। একসময় সেটি ফেলে দিতে হয় নতুন স্থান সংকুলন ও মেয়াদ চলে যাওয়ার কারনে। এতটুকু হলেই হত। কিন্তু এখন সেটি হয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর।কিভাবে? একটি চক্রের সৃষ্টি হয়েছে যারা অসাধু কাজটি শুরু করেছে।
সরকারি কেন্দ্রগুলোতে যেসব ব্যাগ রয়ে যাচ্ছে তা ফেলে দেওয়ার আগে কোনও একটি স্থান থেকে চাহিদাপত্র দেখিয়ে সেগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা করে (কিছু অসাধু কর্মচারী সেগুলো ফেলে না দিয়ে বিক্রি করে দেয় কিছু ক্ষেত্রে)। সেই ব্যাগগুলো থেকে রক্ত, নতুন ব্লাড ব্যাগে নেওয়া হয় Anti-coagulant ফেলে দিয়ে। তারিখ হয়ে যাচ্ছে একেবারে সদ্য। এই কাজগুলো করছে সঙ্গবদ্ধ চক্র, ভুঁইফোড় ব্লাড ব্যাংকসহ অনেকেই।
প্রতিষ্ঠিত অনেক সেন্টারে Whole blood process করা হয় না, হয় Red cell concentrate(RCC). অসাধু যারা জড়িত তারা এতই বুদ্ধিমান যে সেই RCC এর সাথে একই গ্রুপের প্লাজমা মিশিয়ে দিয়ে Whole blood বানিয়ে ফেলে। ব্যাগগুলোকে অনেকক্ষণ ঝুলিয়ে রাখলেও দেখবেন কোনও প্লাজমা বের হচ্ছে না অনেক সময়, সেল তো ভেঙে যাচ্ছে সেই ক্ষেত্রে।
কয়েক সপ্তাহ আগে জানতে পারলাম, কোনও একটি সেন্টারে রক্ত দেওয়ার পর দিন রোগীর Renal Shutdown হয়ে রোগী খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং কয়েকজন মারাও গেছেন; যা আসলেই কাম্য নয়।
কী করা তাহলে?
১. প্রি-ডোনেশন স্ক্রিনিং স্বল্প পরিসরে হলেও চালু করা যেতে পারে যেক্ষেত্রে সম্ভব। তাতে অযাচিত রক্তের অপচয় রোধ করা সম্ভব ।
২. প্রতিটি হাসপাতালে নিজস্ব ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যাতে বাইরে থেকে রক্ত সংগ্রহের প্রবনতা রোধ করা সম্ভব এবং তা অবশ্যই সরকারি নির্দেশনা মেনে করা উচিত।
৩. রক্ত রোগীর শরীরে দেওয়ার পূর্বে ভালো করে দেখে নেওয়া সেল লাইসিস, রক্তের কালার পরিবর্তন ইত্যাদি হয়েছে কিনা ইত্যাদি।
সচেতনতা বৃদ্ধির সময় এখনই, নয়ত যেকোনো সময়ে হারিয়ে যেতে পারে খুব কাছের আপনজন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন