দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাম-রুবেলা (এমআর) টীকার সংকট চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে টীকা দিতে না পারলে শিশুদের মামস, জ্বর, র্যাশ ওঠা ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এ টীকার সরবরাহ না থাকায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন শিশুর মা-বাবারা। প্রতিদিন শিশুসন্তানকে টীকা দেওয়ার জন্য তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন। কিন্তু হাম-রুবেলা (এমআর) টীকার সরবরাহ না থাকায়, তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে।
পার্বতীপুর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় পৌনে ৪ লাখ মানুষের বসবাস। টীকা সংকটের কারণে উপজেলার বিপুলসংখ্যক শিশু বর্তমানে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে হাম-রুবেলা টীকার সরবরাহ নেই। এছাড়াও চলতি মাসের শুরু থেকে শিশুদের জন্য মারাত্মক রোগের ৬ ধরনের রোগপ্রতিরোধক টীকার মধ্যে অন্যান্য গুলিরও সংকট দেখা দেয়।
নিয়ম অনুযায়ী এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এই সময়ের মধ্যে একবার হাম-রুবেলা টীকা পাওয়ার কথা। তবে টীকা সংকটের কারণে শহর-গ্রামাঞ্চল থেকে প্রতিদিন বহু অভিভাবক হাসপাতাল এসে টীকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
কমপ্লেক্সে আসা একাধিক শিশুর মা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে টিকা দিতে না পারলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়- টীকাদান কেন্দ্রের সামনে শিশুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন মা। তাদের টীকাদানের কার্ডে টীকা প্রদানের নির্দিষ্ট সময় লেখা থাকলেও তা ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে অনেকের। কিন্তু টীকা না থাকায় আজও ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
নয় মাস বয়সী মেয়ে নাজিফা জাহানের জন্য হামের টীকা নিতে আসা ভবানীপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোস্তাফা কামাল ও স্ত্রী সানজিদা খাতুন বলেন, মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে হামের টিকা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে ধরনা দিচ্ছি। টীকার সরবরাহ নেই বলে অন্যদিনের মতো আজও আমাদের টীকা না নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
পার্বতীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মা-বাবা এখানে হাম-রুবেলার টিকা দেওয়ার জন্য এসে ফিরে যাচ্ছেন। সরবরাহ না থাকায় টীকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (সম্প্রসারিত টীকাদান কর্মসূচি/ইপিআই) আজহারুল আনাম বলেন, সরবরাহ না থাকায় হাম-রুবেলা টীকার সংকট চলছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস এসব টীকার সরবরাহ দিয়ে থাকে।
পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল্লাহেল মাফি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে (১-৫ বছর) হাম-রুবেলার টীকা প্রয়োগ করা না গেলে মামস, জ্বর, র্যাশ ওঠা ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তিনি দাবি করেন শুধু পার্বতীপুরে নয়, বর্তমানে সারা দেশে কোথাও এ টীকার সরবরাহ নেই। তবে শিগগিরই এ সংকট কেটে যাবে বলে তিনি জানান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন