খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ সাত বছর ধরে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে ক্যান্সার নির্ণয়ের লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিন।
২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা এ মেশিনটির সুফল পাচ্ছে না এ অঞ্চলের রোগীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে বাঙ্কার না বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে মেশিন কেনার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে বস্তাবন্দি অবস্থায় রয়েছে এত টাকা মূল্যের এ মেশিনটি। খুলনা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরে মেশিনটি কেনা হয়।
কেনার পর থেকে গত ৭ বছর ধরেই সেটি পড়ে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অপরিণত সিদ্ধান্ত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মেশিনটি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মেশিনটি স্থাপনের জন্য কোনো প্রকার পূর্ব ব্যবস্থা না করেই সরকারের বিপুল অর্থ দিয়ে মেশিনটি কেনা হয়। অপরদিকে খুলনায় লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিন বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় বাঙ্কার না থাকায় সেটি প্রথমে ঢাকার মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও খুলনাবাসীর তোপের মুখে পড়ে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
এ নিয়ে ওই সময় বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এরপর অনকোলজি বিভাগেই কিছু সংস্কার করে মেশিনটি স্থাপনের প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়। যদিও সে কাজও বেশিদূর এগোয়নি। গণপূর্ত অধিদফতর খুলনা-১ এর আওতায় এ বিষয়ে কিছু কাজও করা হয়।
২০১৫ সালে খুলনায় চিকিৎসকদের একটি সমাবেশে বক্তৃতাকালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন, প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিন স্থাপন করা হবে। কিন্তু সেটিও হয়নি। মেশিনটি প্রতিস্থাপন এবং আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাড়ে সাত কোটি টাকা চাওয়া হয়। যার মধ্যে ৫ কোটি টাকা মেশিনের অন্যান্য অংশ ও ২ কোটি টাকা অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে দেখার পর জানানো হয়, এটির অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। যে কারণে এ উদ্যোগ আর সামনে এগোয়নি।
অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মুকিতুল হুদা বলেন, বর্তমানে যে লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিনটি এখানে পড়ে আছে সেটি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে আর ঢাকা থেকে আর একটি মেশিন এখানে আসবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খুলনায় পড়ে থাকা লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিনটি যেহেতু খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি সেহেতু কোম্পানির পক্ষ থেকে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। ওই ব্যক্তিই মেশিনটি পাহারা দিয়ে রাখছেন কোম্পানির খরচে।
বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন খুমেক হাসপাতালের হিসাব বিভাগ এবং অনকোলজি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেও কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
খুমেক হাসপাতালের স্টোরকিপার শরীফুর রহমান বলেন, যেহেতু লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিনটি তৎকালীন সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি সেহেতু এর মূল্য কত সেটিও জানা যায়নি। যখন এটির স্থাপন কার্যক্রম শেষ হবে তখনই সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় মেডিকেল স্টোর ডিপো) থেকে এর ভাউচার পাঠানোর পরই মূল্য জানা যাবে।
হাসপাতালের হিসাবরক্ষক গোলাম কিবরিয়া বলেন, যেহেতু মেশিনটি অনেক আগেই এখানে পাঠানো হয়েছে সেহেতু এর সম্পর্কিত কোনো তথ্যই তার কাছে নেই।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ইতিমধ্যেই লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিনটির ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি জামানতের টাকাও পায়নি। সুতরাং এটি এখন এখানে বসানোও ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে অনুযায়ী নতুন একটি কোবাল্ট মেশিন বসানোটিই ঠিক হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন