উপজেলার মালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম (৬০), প্রচন্ড বুকে ব্যাথা নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) বিকেলে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। একই দিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন ডাক্তার না পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত উপস্বাস্থ্য সহকারীর সরনাপন্ন হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।
বুকে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার মহিলা কেবিনের একটি বেড়ে ছটফট করলেও রাত ১১ টা পর্যন্ত কোন ডাক্তারের দেখা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তার স্বজনেরা। এছাড়া উপজেলার জিলবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ খলিল মৃধা (৬৫) কে তার স্বজনেরা ভর্তি করাতে এসে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী ডাক্তার ও নার্স কাউকে না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
এ সময় ওই বৃদ্ধের জামাতা নুরুল ইসলাম, সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে কোন ডাক্তার নেই। নানা রোগে আক্রান্ত ভর্তি থাকা ৩৫/৪০ জন রোগী ও তাদের স্বজনদের বিপদে ফেলে ডাক্তার, নার্সসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ১৪ ফেব্রুয়ারী বনভোজনে কুয়াকাটা গেছেন।
এখন এই রাতে অসুস্থ্য রোগীকে নিয়ে আমরা কোথায় যাব? নুরুল ইসলামের মতো একই অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রাহেলা বেগম (৪৫), রেনু বেগম (৩০), খাদিজা (১৮), কহিনুর বেগম (৭৫) হালিমা বেগম (৪৫) আঃ মান্নান জমাদ্দার (৪৮) তাসলিমা বেগম (৩০) এর স্বজনেরাসহ অনেকেই।
মনোয়ারা বেগমের মেয়ে তাসলিমা বলেন, মাকে নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি এই মুহুর্তে ঢাকা-খুলনায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ নেই। এখানে এসে দেখি হাসপাতালটি ডাক্তার শুন্য। অপরদিকে মারপিটে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা সবুর মৃধার বোন খাদিজা বেগম বলেন, গত ৩ দিন ধরে হাসপাতালে কোন ডাক্তার না থাকায় অনেকেই ভর্তি হয়েও রোগী নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবে সময় ৫০ সয্যা হাসপাতালটিতে ৩৫/৪০ জন রোগী ভর্তি দেখা গেলেও কর্তব্যরত অবস্থায় শুধুমাত্র ২ জন নার্স ও জরুরি বিভাগে একজন উপস্বাস্থ্য সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে বনভোজন কালীন সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ খাইরুল বাশার ইউসুফ বনভোজনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অন্যান্য দিনগুলির তুলনায় রোগীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে তার এবং রোগীরাও কিছুটা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে হাসপালের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ সোহান আহম্মেদের ০১৭২২৫৩৭৩০৯ নং মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে, বনভোজনে তার সফর সংঙ্গী হিসাবে থাকা ডাঃ রিপন নাথ মুঠোফোনে জানান, আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ৪ দিনের জন্য পিকনিক করতে কুয়াকাটায় আছি। আমাদের সাথে ফকিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ অসীম কুমার সমাদ্দার ও বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জন জি.কে শামসুজ্জামানসহ অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন।
এ ব্যপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ আকন বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় অর্ধশত রোগীকে বিপদে ফেলে এভাবে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একযোগে বনভোজনে যাওয়ার বিষয়টি অমানবিক। হাসপাতালটি ডাক্তার শূন্য হয়ে যাওয়ায় রোগীদের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে যে কোন মুহুর্তে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটতে পারে। কর্মক্ষেত্রে ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে উন্নয়নমূখী সরকারের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন জি.কে শামসুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন