অফিসে মানেই ফিটফাট। আর পুরুষের জন্য ফিটফাট মানেই সবার আগে দাড়ি কামানো। প্রয়োজনে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দাড়ি কামাও, তারপর অন্য কাজ সেরে অফিসে যাও। যদি জামা কাপড়ের পাশাপাশি ঠিকঠাক দাড়ি কামানো না হয়, তাহলে অফিসের কর্তা হয়ে ওঠেন রীতিমত আগুন! ক্রমাগত স্মরণ করিয়ে দেন-এটা তো অফিস তাই না? কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, এ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছে ব্লেড নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘জিলেট’ও। আর সেজন্য তারা ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কারণ মানুষ আর আগের মত দাড়ি কামাচ্ছে না। একইসঙ্গে দাড়ি না কামানোকে ফ্যাশান বলে মনে করা হচ্ছে।
ভোক্তা গবেষণা বিষেজ্ঞরা বলছেন, মানুষ এখন বিভিন্ন আকারে দাড়ি রাখছে। কারো মুখ ভর্তি দাড়ি, কারো ‘ছাগলে দাড়ি’ আবার কারো খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কিন্তু এই মানুষগুলোই আগে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে সুন্দরভাবে দাড়ি কামিয়ে যেতেন। কোনো ছুটির দিনে হয়তো দাড়ি কামানো থেকে বিরত থাকতেন। তাছাড়া দাড়ি না কামানো সমাজে একধরনের ট্যাবু হিসেবে কাজ করতো।
জিলেটের মূল প্রতিষ্ঠান প্রক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল (পিজি) এর দক্ষিণ আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মিসিমিলিয়ানো মিনোজ্জি বলেন, ‘মানুষের কাছে এখন দাড়ি না কামানোটা অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। অনেকে প্রতিদিন তো দূরে থাক সপ্তাহে একবারও দাড়ি কামান না। কারণ মানুষ এখন আর দাড়ি না কামানোকে নেতিবাচক হিসেবে দেখে না। আবার কেউ যদি কখনো দাড়ি কামাতে ভুলে যান তাহলে তাকে অলস বলা কিংবা অসম্মানজনকও কিছু বলেন না।
কিন্তু মানুষ দাড়ি কমানো কমিয়ে দিলে ব্লেড কোম্পানিগুলোর কী হবে?- অন্যরা কী করবে তার জন্য বসে নেই জিলেট। সমাজে যেভাবে শেভহীনদের সংখ্যা বাড়ছে সেটার সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে তারাও। একইসঙ্গে নিজেদের ব্লেডের বিক্রি বাড়াতে নানা ধরনের কৌশলের উপর জোর প্রয়োগ করছে বলেও জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জন মুয়েলার।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিনটেলের আবাসন ও ব্যক্তিগত যত্ন বিশ্লেষক অলিভা গুইনাফ বলেন, বয়সভেদে মানুষের দাড়ি কামানোর প্রবণতা একেক রকম। তবে ৪৫ বছর বয়সের নিচের পুরুষরা এটাকে গা ছাড়া বিষয় হিসেবে দেখে। মানুষ নিজেদেরকে শান্ত চেহারার আকৃতি দিতে চায় এবং এদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, অনেক মানুষই বিশ্বাস করে, মুখে দাড়ি রাখা খুবই জনপ্রিয়, প্রকৃতিক এবং আকর্ষণীয় একটি বিষয়।
জিলেট এক জরিপে দেখিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে মানুষের দাড়ি কমানোর সংখ্যা ৩ দশমিক ৭ থেকে ৩ দশমিক ২ এ নেমে এসেছে। এসব মানুষের কেউ মাসে দুইবার অথবা তারও কম দাড়ি কামান। যুক্তরাষ্ট্রে গত তিন বছর ক্রমাগত ব্লেড ও রেজার বিক্রি কমেছে। তবে সেই কমার সংখ্যাটা খুব কম হলেও সেটা দৃশ্যমান। শুধু তা-ই নয়, গত বছর যে পরিমাণে বিক্রি কমেছে ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে সেটার চেয়ে বেড়ে দাড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
তবে এটা মোকাবেলা করার জন্য জিলেট নতুন নতুন ব্লেড ও রেজার বাজারে ছাড়ছে। একইসঙ্গে সেগুলোর দাম অনেক কম রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ যেভাবে দাড়ি কামানো কমছে তাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
সূত্র : সিএনএন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন