ঘোষিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে কোরবানির বেশির ভাগ বর্জ্য অপসারণ করেছে সিটি করপোরেশন। আজকের মধ্যেই বাকি বর্জ্য অপসারিত হয়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বর্জ্য অপসারিত হওয়ায় সন্তুষ্ট রাজধানীবাসী। দুই সিটি করপোরেশনে ঘুরে বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপকালে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানা গেছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মীদের আন্তরিকতা, অনুকূল আবহাওয়া, পূর্ব প্রস্তুতি এবং নগরবাসীর সহায়তায় এবার বর্জ্য অপসারণ নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদের প্রথম দিন বর্জ্য অপসারণ উদ্বোধনের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ‘নাগরিকদের সহযোগিতা পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ কাজ শেষ করা যাবে।’
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভাল। আমাদের জনবল ৬ হাজার ৫৫১ জন কর্মী এবং ৩৫০টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার বর্জ্য রাখার ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটা ওয়ার্ডে কাউন্সিলরা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে মিটিং করেছে। কোরবানি করার সুবিধার্থে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪৯টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। ঈমাম থাকবেন ৫৯২ জন। সব মিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি খুব ভাল।’
দ্রুত সময়ে বর্জ্য অপসারণে মানুষের সহযোগিতা দরকার বলে জানিয়ে এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘মানুষ যদি সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করে তাহলে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করতে পারবো।’
বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীর মধ্যেও সহযোগিতার মনোভাব দেখা গেছে। নির্দিষ্ট স্থানে যারা পশু কোরবানি দিতে পারেননি তাদের বস্তায় ভরে বর্জ্য রাখতে দেখা গেছে। আর যারা তা রাখেননি তারাও এক জায়গায় স্তূপ করে বর্জ্য রেখেছেন। আর নিজেরাই ছিটিয়েছেন ব্লিচিং পাউডার।
মিরপুর কাঁঠালতলা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী তারেক সিদ্দিক তার বাসার সামনে গরু কোরবানি দিয়েছেন। তিনি নিজের উদ্যোগেই সব বর্জ্য পরিষ্কার করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় রেখেছেন।
তারেক সিদ্দিক ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আসলে পরিবেশ দূষিত হলে আমাদেরইতো বেশি অসুবিধা হবে, তাই নিজেই এটা পরিষ্কার করলাম।’
তবে একই এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বস্তা ভরে ময়লা রেখেছি, কিন্তু এখনো সিটি করপোরেশনের কেউ এলো না। আমরা নিজেরাই যদি ময়লা ফেলে আসি তাহলে আমাদের ট্যাক্স দিয়ে লাভ কী। ময়লা থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে, জানি না কখন আসবে তারা।’
রাজধানীর ভূতের গলি মসজিদের সামনের বাসিন্দা রাশেদুল হল কোরবানি দিয়েছেন তার গ্যারেজে। গরু কাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জায়গাটি ভালোভাবে ধুয়ে দিয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েছেন। আর বর্জ্য বস্তায় ভরে বাসার সামনে রেখে দিয়েছেন স্তুপ করে।
সানোয়ার হোসেন কোরবানি দিয়েছেন কাঁটাবন এলাকায়। তিনি লোক ভাড়া করে ময়লাগুলো সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলেছেন।
সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। আর এত টাকা দিয়ে গরু কিনতে পারলাম, ময়লা পরিষ্কার করতে পারবো এটা হতে পারে না। এটা মানসিকতার বিষয়।’
মুগদা, রামপুরা বাজার, ওয়াপদা রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সে রাস্তাগুলো পরিষ্কার। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছি। আসলে এত তাড়াতাড়ি কোনও সময়ই দেখিনি বর্জ্য অপসারণ করতে।’ এর জন্য সিটি করপোরেশন ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন তিনি।
যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতে এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২৫টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৯টি স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। তবে এসব স্থানে খুব কম পশুই জবাই করতে দেখা গেছে। রাস্তা, অলিগলি ও বাড়ির গ্যারেজেই পশু জবাই করতে বেশি দেখা গেছে বেশি।
সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়, এবার ঢাকায় প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। আর এসব পশুর বর্জ্য সরিয়ে নিতে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শফিকুল আলম ব্রেকিংনিউজকে জানান, ডিএসসিসির ১৩০টি খোলা ট্রাক, ৩৭০টি কনটেইনার, ৮৫টি কনটেইনার মুভার, ৬৫টি ডাম্প ট্রাক, ১৫টি পেলোডার, ১০টি টায়ারলোডার, ৯টি স্কিড লোডার এবং ১২টি পানির গাড়ি নগর পরিষ্কারে কাজে রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন