জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ হয়েই থাকতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান।
মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়িতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নগর বিএনপির আলোচনা সভায় একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘স্বাধীনতার যুদ্ধ বাই ডিক্লারেশন জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ২টা ৩৫ মিনিটে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য।’
স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে গুণগত একটু পার্থক্য আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মানে একটি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সামগ্রিক পরিবর্তনের চাওয়া। আর স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছে ডিক্লারেশনের মাধ্যমে একটি দেশকে স্বাধীন করা। সেই স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান পথ হচ্ছে লড়াই করা এবং সেটা জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে ডিক্লারেশনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। জিয়াউর রহমান জাতীয় রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।’
‘জিয়াউর রহমান ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করার কথা না বললে সেটা গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হত, স্বাধীনতা যুদ্ধ হতো না। গৃহযুদ্ধে কোনো ফল আসে না, শুধু ধ্বংস আনে। সেজন্য জিয়াউর রহমান সেদিন ঘোষণা করেছিলেন- পাকিস্তানের সাথে আর থাকা যায় না, আমরা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী থেকে বেরিয়ে এসেছি, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার জন্য আমরা লড়াই করছি, দেশের মানুষ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে আমাদের দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমাদের লড়াইয়ে সমর্থন দিন।’
নোমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে গুণগত পার্থক্য... একটা হচ্ছে লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, আরেকটা হচ্ছে লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। জিয়াউর রহমান সেজন্যই ঘোষণা করেছিলেন, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করব লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সেই লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট হিসেবে তিনি সেদিন চট্টগ্রামের ষোলশহরে ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানালেন।’
‘ইতিহাসকে পরিবর্তন করা যাবে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ঘোষণার ধারাবাহিকতায় দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল এবং নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করল। কোনো গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি, এজন্য লড়াই করতে হয়েছে সামরিক বাহিনীকে। যে সামরিক বাহিনী নিশ্চুপ ছিল, কি করবে বুঝতে পারছিল না, জিয়াউর রহমানের কন্ঠস্বর শুনে সেই সামরিক বাহিনীও উজ্জীবীত হয়েছিল।’
‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। এটাই মূল ঘোষণা। তিনি ঘোষণা না দিলে, পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে থেকে যুদ্ধ করলে, সেটা হতো গৃহযুদ্ধ। আমাদের যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমে অনেক রাষ্ট্র সমর্থন দিতে অনীহা প্রকাশ করেছিল। তারা বলেছিল, এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন মিলতো না, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ গৃহযুদ্ধই হয়ে থাকতো সেটা।’
সাবেক সেনাশাসক প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে উদ্ধৃত করে নোমান বলেন, ‘তিনি নিজে বলেছিলেন-যখন আমি দেখলাম, করাচিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাঙালিদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে, তখন করাচিতেই আমি এক কুস্তিখেলায় তাদের পরাজিত করেছিলাম, সেদিন থেকেই আমি বলেছিলাম যে, এই পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে লড়াইয়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও তখন জিয়াউর রহমান নিয়েছিলেন।’
নিজের ছাত্র রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমি ১৯৭০ সালে স্লোগান দিয়েছিলাম- মুক্তি যদি পেতে চাও, হাতে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়াও। সেই স্লোগানের জন্য পাকিস্তান সরকার আমাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়ে স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা দিল। জিয়াউর রহমান যদি আমাদের লড়াইয়ের পথ না দেখাতেন, তাহলে দেশ স্বাধীন হতো না। আর আমি রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে পাকিস্তানের জেলখানায় থাকতাম। জিয়াউর রহমান লড়াইয়ের মাধ্যমে একটি জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ পেয়েছি।’
স্বাধীনতার সুফল না পাবার আক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ স্বাধীন রাষ্ট্র পরাধীন হয়ে গেছে। স্বাধীনতার যে স্বাদ, সেটা এদেশের মানুষ পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি দেউলিয়া হয়ে গেছে, মানবাধিকার নেই। এদেশের মানুষ আবার মুক্তি চায়। মানুষ আবার লড়াই করতে চায়, যে লড়াইয়ের মাধ্যমে একাত্তরে জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই জাতীয় রাষ্ট্রের যে উপাদানগুলো ছিল, সেগুলো যাতে নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য মানুষ আবার লড়তে চায়।’
জিয়াউর রহমানের রাজনীতির পথ ধরে দেশনায়ক তারেক রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব। আমরা আবার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ, সামাজিক ন্যায়বিচার আবার প্রতিষ্ঠা করব।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, নগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও একরামুল করিম, এম এ সবুর, যুগ্ম আহবায়ক আবদুস সাত্তার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এনামুল হক, জেলা ড্যাবের সভাপতি তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, মুফিজুল হক ভূইয়া এবং জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের হাসান আলী।
১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল সেনাসদস্যের হাতে খুন হয়েছিলেন।
সারাবাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন