ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের কাছে বিএনপির মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংস তৎপরতার কথা তুলে ধরেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা। এ সময়ে তাদের মধ্যে ৩০ মিনিট বৈঠক হয়েছে।
এরপর সাংবাদিকদের কাছে হাছান মাহমুদ বলেন, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছেন। পাশাপাশি ১১ ডিসেম্বর তাদের উদ্যোগে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘মানবাধিকার সংরক্ষণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে আমাকে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছেন। এছাড়া ছোটখাটো অন্যান্য বিষয়- যেমন পরিবেশ সংরক্ষণ, কপ-২৭ এর ফলাফল এবং গণমাধ্যম নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমি সংক্ষেপে জাতিসংঘের এ প্রতিনিধির কাছে বিএনপির মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিভিন্ন সময় করা সহিংস কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেছি।
গোয়েন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, আমি মাস ছয়েক আগে এ দেশে এসেছি। আজ তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং একইসাথে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ করতে এসেছি। পাশাপাশি গণমাধ্যম, জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্প্রতি সমাপ্ত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয়ের সিনিয়র হিউম্যান রাইটস অ্যাডভাইজার হুমা খান এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর দফতরের পরিচালক (জনসংযোগ) মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণ্ডগোল করার উদ্দেশ্যে সরকার কোনো সমাবেশের অনুমতি দিতে পারে না। প্রথমত, হীন উদ্দেশ্য নিয়েই বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চাচ্ছে। বড় সমাবেশ কখনও রাস্তায় হয় না। রাস্তায় বড় সমাবেশ করা অনুচিত। এতে জনগণের দুর্ভোগ হয়।
তিনি বলেন, নয়াপল্টনের সামনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ ধরে। পুরো এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়েও যদি মানুষ বসে, তাহলে ৫০ হাজারের বেশি ধরার কথা না। অথচ সেখানে তারা সমাবেশ করতে চায়। এর মানে আসলে তারা জানে যে, কত লোক হতে পারে। তাদের লোক যে ৩০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি হবে না; এটা তারা আগে থেকেই জানে। সেটিও যদি হয়। কোনো অবস্থায়ই একটি ব্যস্ত রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা উচিত নয়।
মন্ত্রী জানান, নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করার ওপর জোর দেয়ার মাধ্যমে এটিই প্রমাণ করছে, তাদের লোক হবে না বলে তারা শঙ্কিত। আর রাস্তায় সমাবেশ করলে গন্ডগোল করতে সুবিধা হয়। এ দুই উদ্দেশ্যে তারা সেখানে সমাবেশ করতে চায়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যখন বিচার শুরু হয়, তখনই এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়। সে সময় ৪১৯টি ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয় ৪৯২ জন, আহত আড়াই হাজারের কাছাকাছি। এক একটি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত হত্যা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি জোটের ভয়াবহ সন্ত্রাসের রাজত্ব ভুলে যাওয়ার মতো নয়। তখন শত শত যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। পেট্রোল বোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে হাসপাতালগুলোর বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায়ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি লাখ লাখ গাছও। নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করা হয় ২৬ জন নিরীহ মানুষকে। সারা দেশে ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন