দুপুরের দিকে কয়েক হাজার মোটরসাইকেলযোগে বিশাল বহর নিয়ে সিলেট অভিমুখে রওয়ানা দেন সুনামগঞ্জের নেতারা। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জের সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন। ধর্মঘট থাকায় পথে পথে বাধা ডিঙিয়ে সন্ধ্যার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সিলেটে পৌঁছে ওই বহর। এর একটু আগে সোনালী রঙের টুপিপরা কয়েক হাজার নেতাকর্মীর একটি মিছিল সুনামগঞ্জ রোড ধরে এসে সিলেটে প্রবেশ করে। এই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। দুটি মিছিলে একসঙ্গে অন্তত ১২ হাজার নেতাকর্মী আসেন সিলেটে। এভাবেই বিকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সিলেটে পৌঁছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে সিলেটে ছিল দু’দিনব্যাপী ইজতেমার আখেরি মোনাজাত। এ কারণে সিলেটে প্রায় মানুষই অংশ নেন আখেরি মোনাজাতে। কিন্তু জুমার পর বদলে যায় দৃশ্যপট।
আলীয়া মাদ্রাসামুখী বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ঢল নামা শুরু হয়। শতাধিক মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা মাঠে ঢোকে। এসব বহরের বেশিরভাগই ছিলো মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের নেতাকর্মীদের। তারা ধর্মঘটের মধ্যে ভেঙে ভেঙে সিএনজি অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহনে সিলেটে পৌঁছেন। আবার বৃহস্পতিবার রাতেই অনেকেই পৌঁছে যান সিলেটে।
এ কারণে জুমার পরপরই তারা মিছিল নিয়ে মাদ্রাসা মাঠ অভিমুখে রওয়ানা দেন। মৌলভীবাজার বিএনপি’র সভাপতি নাসের রহমানের নেতৃত্বে একটি বড় মিছিল বেলা ৪টার দিকে সিলেটে এসে পৌঁছে। হবিগঞ্জের জি কে গৌছের নেতৃত্বে আর একটি মিছিল। এসব মিছিলে শ’ শ’ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। গতকাল সকাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে এসে পৌঁছে অন্তত ৪টি ট্রেন। এসব ট্রেনে করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে আসেন। এসব ট্রেনে করে হবিগঞ্জের মাধবপুর, শায়েস্তগঞ্জ, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগরের কর্মীরা আসেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। তারা জানান, শ্রীমঙ্গল আসার পর আরও কয়েকশ’ নেতাকর্মী ট্রেনে ওঠেন। এরমধ্যে অনেকেই ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে সিলেট পৌঁছেন। এদিকে, রাতের ট্রেনের আরও কয়েকশ’ নেতাকর্মী সিলেটে আসেন বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী। তিনি জানিয়েছেন, আমরা পাহাড়িকায় যখন শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা দেই তখন অনেক নেতাকর্মী স্টেশনে থেকে যান। তারা পরের ট্রেনে সিলেটে আসেন। নেতাকর্মীরা ট্রেনে করে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে আসার পর ওখান থেকে মিছিল নিয়ে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে যান। রাতে এসব নেতাকর্মী মাদ্রাসা মাঠেই অবস্থান করবেন বলে জানান তিনি।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জের সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুরসহ কয়েকটি এলাকার নেতাকর্মী বৃহস্পতিবার রাতেই সিলেটে এসে পৌঁছেন। আর গতকাল সকালে রওয়ানা দেন সিলেট জেলার নিকটবর্তী উপজেলাগুলোর নেতাকর্মীরা। বিকালের মধ্যে এদের বেশির ভাগই আসেন মোটরসাইকেল ও নৌকায় করে। তিনি জানান, তার জেলা থেকে অর্ধলাখ মানুষ সিলেটের সমাবেশে ছুটে এসেছেন। আরও কয়েকটি মিছিল আসার কথা রয়েছে। এসব নেতাকর্মীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা তাদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে, সন্ধ্যার পর মিছিলের বহর আরও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নগরে প্রবেশ করেন। এ কারণে গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় সিলেট। এদিকে, মিছিল যত বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের সংখ্যা তত বাড়তে থাকে। শেষ বিকালে সিলেট ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসা ময়দান নেতাকর্মীতে ভরপুর হয়ে যায়। সন্ধ্যায় বিশ্বনাথ থেকে আসে একটি বড় বহর। বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া জানিয়েছেন, বিশ্বনাথ উপজেলা থেকে ১০ হাজার নেতাকর্মী আসতে শুরু করেছেন। যারা বাকি আছেন তারা রাতের মধ্যে চলে আসবেন। বিশ্বনাথ থেকে আসা নেতাকর্মীদের দেখভাল করছেন উপজেলার সিনিয়র নেতারা।
আরিফের শোডাউন: গতকাল বিকালে সিলেট নগরে বড় শোডাউন দিয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার মিছিলে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। নগরজুড়ে দেয়া এ মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন মেয়র আরিফ। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল ও জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি কুমারপাড়া পয়েন্ট থেকে নয়া সড়ক হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে সমাবেশস্থলে যায়। মিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয়, সিলেট জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ ছাড়া মিছিলের অগ্রভাগে বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. জাহিদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওসমানী নগর প্রতিনিধি জানান, ওসমানীনগর থেকে একদিন আগে গণসমাবেশে যোগ দেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে মানবজমিনকে একথা বলেছেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি দয়ামীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এটিএম তাজ মোহাম্মদ ফখর উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সরকারের ইশারায় সমাবেশের দিন পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তাই আমরা আগের দিন সমাবেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৫ থেকে ৬ হাজার নেতাকর্মী শুক্রবার রাতেই সমাবেশ স্থলে থাকবে বলে আশা করছি। যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় তবে এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে। উল্লেখ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও ইলিয়াস আলীর সন্ধানসহ বিভিন্ন দাবিতে সারা দেশে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গণসমাবেশ করবে বিএনপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন