মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর এলাকায় গতকাল বুধবার বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে। বিএনপি বলছে, আহত দুজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষের সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সমাবেশের সময় পুলিশের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ চলে।
প্রত্যক্ষদর্শী, বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পূর্বনির্ধারত সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য মিছিল নিয়ে মুক্তারপুরে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে ব্যানার টানাটানিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের
বাগবিতণ্ডা হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা তিন দিক থেকে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। পুলিশও টিয়ার গ্যাসের শল নিক্ষেপ করে এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং মোটরসাইকেলে আগুন দেন। এ সময় মুক্তারপুর পুরনো ফেরিঘাট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই সংর্ঘষে কমপক্ষে ১৫ জন পুলিশ সদস্য, চারজন সাংবাদিক, পথচারীসহ অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন। আহত বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান, এসআই সুকান্ত বাউল, মাইনুদ্দিন, আনিসুল, কনস্টেবল রায়হান, ইলিয়াস খানসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক সমকালের কাজী সাব্বির আহম্মেদ দীপু, কালবেলার মো. রুবেল, দিনকালের গোলজার হোসেন, রজত রেখার সাংবাদিক নাজির হোসেন, ডেইলি অবজারভারের মোজাম্মেল হোসেন সজল ও বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের সোনিয়া হাবিব লাবণী।
এদিকে মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষে আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, এর মধ্যে ছাত্রদলের নেতা শাওনকে লাইফ সাপোর্টে এবং যুবদলের নেতা জাহাঙ্গীরের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, শাওনের মাথার আঘাত গুরুতর, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। টিয়ার গ্যাসের শেলের আঘাতে জাহাঙ্গীরের নাকমুখ থেঁতলে গেছে। বিকল্প পথে শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারেকের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা মোটামুটি ভালো মনে হচ্ছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় দুই দিক থেকে পৃথক দুটি মিছিল আসছিল। হঠাৎ পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয় এবং কর্মীদের লাঠিপেটা করে। এতে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ায় আমাদের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। তবে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, এমন কথা আমার জানা নেই। ’
সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হঠাৎ করে তিন দিক থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ আত্মরক্ষায় টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরো বলেন, ‘হামলায় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, আমিসহ ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় ছয়টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ’
‘বিনা উসকানিতে পুলিশের হামলা’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী অভিযোগ করেছেন, মুন্সীগঞ্জে বিনা উসকানিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন