ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ও সিপিবি। পৃথক বিবৃতি ও বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে বিপরীতমুখী এই দুই রাজনৈতিক দল জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত একেবারেই অযৌক্তিক এবং চরম জনস্বার্থ বিরোধী। শনিবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতি তিনি বলেন, সরকার জনগণের দুঃখ-কষ্টের কথা বিবেচনা না করেই ৫ই আগস্ট মধ্যরাতে এক ঘোষণার মাধ্যমে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য ৪২.৫%, পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য ৫১% বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের পূর্বে লিটার প্রতি মূল্য ছিল ৮০ টাকা, যা প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে হয়েছে ১১৪ টাকা। পেট্রোলের মূল্য ছিল পূর্বে লিটার প্রতি ৮৪ টাকা যা প্রতি লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে হয়েছে ১৩০ এবং পূর্বে অকটেনের লিটার প্রতি মূল্য ছিল ৮৯ টাকা যা প্রতি লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে হয়েছে ১৩৫ টাকা।
তিনি আরও বলেন, জনগণের স্বার্থকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করে সরকার একতরফাভাবে তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই জনগণের নাভিশ্বাস। এর মধ্যে তেল ও গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব সকল কিছুর উপর পড়বে। প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী, সেচ, কৃষিপণ্য ও পরিবহন ভাড়াসহ সকল ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিবৃতিতে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ইতোমধ্যেই ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে কোথাও কোথাও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মানুষ এমনিতেই অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি জনগণের জন্য ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা সরকারের এই অযৌক্তিক ও অন্যায্য সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগ ও উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিশাল অংশ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চাকুরি হারিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে দেশের মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। খেটে খাওয়া মানুষের তিন বেলা ডাল-ভাত জোগাড় করতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একেবারেই অযৌক্তিক এবং চরম জনস্বার্থ বিরোধী।
অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য বৃদ্ধির জনস্বার্থ বিরোধী এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বানও জানান তিনি।
সিপিবি’র নিন্দা ও প্রতিবাদ
বিশ্ববাজারে দাম কমানোর পরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে এ লুটেরাদের সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।
তেলের দাম বাড়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
তেলের দাম বাড়ার গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার (৬ই আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এ মন্তব্য করা হয়।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন- সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় নেতা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, সাজ্জাদ জহির চন্দন।
সমাবেশে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এ সরকার অগণতান্ত্রিক ও জুলুমে দেশ চালাচ্ছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের ও লুটেরাদের সরকার। পার্লামেন্টের ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী সদস্য। তারা নিজ নিজ শ্রেণি স্বার্থে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করছে। এ সরকার জনগণের পেটে লাথি মারছে। বাজার অর্থনীতির বিপরীতে জনগণের অর্থনীতিতে দেশ পরিচালনা করা না গেলে দেশের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। ব্যবস্থা বদল করে তীব্র গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের বিকল্প শক্তি গড়ে না তোলার কোনো বিকল্প নেই।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ডিজেল, কেরোসিনসহ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সরকারের পক্ষে অপরাধমূলক কাজ। তেলের দাম বাড়লে যাতায়াতসহ সবকিছুর দাম বাড়বে। অর্থনীতিতে চাপ পড়বে। জনজীবন বিপর্যস্ত হবে।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে দাম কমানোর পরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে এ লুটেরাদের সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। জনস্বার্থের কথা ন্যূনতম বিবেচনা করতে ব্যর্থ এ সরকারের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে সিপিবি জেলা-উপজেলায় ঘেরাও, অবরোধ ও প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে।
মিহির ঘোষ বলেন, এ সরকার গ্যাস, তেল, সার, কেরোসিন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে দেশকে নজিরবিহীন বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। মধ্যরাতের সরকার মধ্যরাতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনগণের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলছে।
পুরানা পল্টনে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সিপিবির একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশ থেকে জ্বালানি তেল, সারের দাম না কমানো পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখতে ও ঘেরাও-অবরোধ-হরতাল সংগঠিত করার প্রস্তুতি নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
একই দাবিতে আজ সারা দেশের অন্তত ২৫টি জেলায় সিপিবির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছে বলেও সমাবেশ থেকে জানানো হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন