অর্ধযুগেও কার্যকর হয়নি বিএনপির গঠনতন্ত্রের ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি। ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দলটির গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারায় বিশেষ এই বিধানটি যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে দলের কোনো পর্যায়ের কমিটির শীর্ষ দুই পদে থাকতে পারবেন না। নতুন নেতৃত্বকে জায়গা করে দিতে দীর্ঘদিন ধরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নীতি কার্যকরের চেষ্টা করছিলেন। এ লক্ষ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও গঠনতন্ত্রের এই ধারা কার্যকর করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত তা সেভাবে কার্যকর করা যায়নি।
এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, এক নেতার এক পদ-এটা কার্যকর হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে একটি পদ ছেড়ে দিয়েছেন। বাকিরাও ছাড়বেন, এটা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলে যোগ্যদের যোগ্য স্থানে দায়িত্ব দিতে চান। বড় দল হিসাবে বিএনপিতে নেতার সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বেশি।
এ অবস্থায় একজন নেতা একাধিক পদ আঁকড়ে থাকলে অন্য যোগ্য নেতাদের পদে বসানোর মতো জায়গার অভাব ঘটে। আর দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেও পরিচয় দেওয়ার মতো কোনো পদে না থাকলে তারা ধরে নেন দল তাকে চায় না। এটি এখন হবে না। নেতাকর্মীদের এই মনোভাব দূর করতে চান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৫(খ) অনুযায়ী, ‘দলের স্থায়ী কমিটি বা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের কোনো সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোনো কর্মকর্তা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক দলের অন্য কোনো পর্যায়ের কমিটিতে কর্মকর্তা নির্বাচিত হতে পারবেন না। তবে অনিবার্য কারণে দলের চেয়ারম্যান সাময়িকভাবে ব্যতিক্রম অনুমোদন করতে পারবেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, একাধিক পদে আছেন-এমন নেতাদের একটি খসড়া তালিকাও তৈরি করা হয়েছিল। একই সঙ্গে দ্বৈত পদধারী ৫৫ নেতার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি। ফলে অনেক নেতা একসঙ্গে কেন্দ্রীয় ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে সম্প্রতি আবার নরসিংদী জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানকে টাঙ্গাইল জেলার আহ্বায়ক, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দীন চৌধুরীকে লক্ষ্মীপুর জেলার আহ্বায়ক, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট জেলার সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া আমানউল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম ছাড়াও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের আরও অন্তত আটজন সদস্য আছেন, যারা একসঙ্গে দুই পদে রয়েছেন। একইভাবে মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি আফরোজা খানম, মুন্সীগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুল হাই, পাবনার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি মেহেদি আহম্মেদ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন।
এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, বান্দরবানের সভাপতি মা ম্যা চিং, চাঁদপুরের সভাপতি শেখ ফরিদউদ্দিন, মুন্সীগঞ্জের সদস্যসচিব কামরুজ্জামান রতন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, বরগুনা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লাও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে আছেন। এছাড়াও অন্তত দুই ডজন নির্বাহী কমিটির সদস্য আছেন, যারা জেলা ও ইউনিট শাখার শীর্ষ পদে রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুল কবির খোকন বলেন, যুগ্ম মহাসচিবের পদ ছাড়তে হবে-এই শর্তে আহ্বায়ক হইনি। হ্যাঁ, দল যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, তা মেনে নেব। আহ্বায়ক কমিটিকে সম্মেলন করার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
অবশ্য ‘এক নেতা এক পদ’ কার্যকর করার নীতিগত সিদ্ধান্তের পর কেউ কেউ স্বেচ্ছায় একটি পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে সর্বপ্রথমে কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। এছাড়াও নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছাড়েন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। একইভাবে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সদস্য) সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছাড়েন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতির পদে থাকতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছেড়েছিলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক হন। তিনিও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদটি ছেড়ে দেন। সর্বশেষ ফজলুল হক মিলনও গাজীপুরের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন