‘গুম’ হওয়া কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের খিলগাঁওয়ের বাসায় শুক্রবার তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১/১১-এর সময় মুচলেকা দিয়ে কে আমেরিকায় চলে গিয়েছিল সেটা আমরা সবাই জানি। নামটা বলতে চাই না। আওয়ামী লীগের নেতারা একেকটা জাহাঁবাজ মিথ্যাবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মতো মিথ্যা কথা কেউ বলতে পারে না। এরা অনর্গল মিথ্যাচার করে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ‘গুম’ হওয়া কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের খিলগাঁওয়ের বাসায় শুক্রবার (২৪ জুন) তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
২০১০ সালের ২৪শে জুন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের (সাবেক ৫৬নং ওয়ার্ড) সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমকে তুলে নিয়ে যায় আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে তাঁর বাড়ির গেইট থেকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ নেই।
তাঁকে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার এই দিনটিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল সাড়ে ১০টায় খিলগাঁওয়ে চৌধুরী আলমের বাসায় যান এবং তার সহধর্মিণী হাসিনা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
এরপর তিনি বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপি মহাসচিব।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা ছাড়া বন্যার্তদের পাশে আর কেউ নেই, বিএনপির নেতারা ত্রাণকাজে নেই, শুধু বক্তৃতা করছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমস্যা হচ্ছে এখনও আপনারা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, নেতাদের কথা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এরা প্রত্যেকে একেকটা জাহাঁবাজ মিথ্যাবাদী এবং এঁদের মতো মিথ্যা কেউ বলতে পারে না। অনর্গল মিথ্যাচার করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর উচিত নিজে মিথ্যাচার না করে তার অধস্তন যেসব মিথ্যাবাদী আছে, তাদের দিয়ে কথা বলানো। উনি মিথ্যা বলে নিজেকে আরও খাটো করছেন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, দেশে একটা ভয়াবহ বন্যা চলছে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে। আমি নিজে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সিলেটে গিয়েছিলাম। নিজের চোখে না দেখলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কোনো ধারণা করা যায় না। মানুষ যে কি পরিমাণ কষ্টে আছে এবং তাদের কাছে যে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, তাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দেওয়া, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া- তার কোনো ব্যবস্থা সরকার করে নাই।
অথচ এই তথাকথিত অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে গিয়ে ওপর দিয়ে ঘুরলেন। তিনি সার্কিট হাউসের হেলিপ্যাডে নেমেছেন। সেখানে ১০জন লোককে টোকেন ত্রাণ দিয়েছেন এবং তারপরে তিনি বলেছেন, সব হয়ে যাবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত পর্যন্ত আমি যা খবর পেয়েছি এগুলো একেবারে কিছুই হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনী নামার পরে তারা সিস্টেমেটিক্যালি কিছু ত্রাণ রিমোট অঞ্চলগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া কিছু কাজ করছে বেসরকারি এনজিওগুলো।
বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রম সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। তারা নিজেদের পয়সা দিয়ে নৌকা ভাড়া করে ত্রাণ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং ব্যাপক হারে কাজ করছে তারা। আমি আপনাদের মাধ্যমে সিলেটের নেতাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। একইসঙ্গে আমি অবিলম্বে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।
বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতার জন্য সরকারকে দোষারোপ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে কারণের বন্যা হয়, তা নিরসনে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং এটা আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন।
হাওরে ৩৩ কিলোমিটারের সড়ককে বন্যার জন্য দায়ী করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, শুনেছি এটা রাষ্ট্রপতির প্রাইম প্রজেক্ট, ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা। এই রাস্তা পানির প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে।
আজকে যে পানি উজান থেকে নেমে আসে সেই পানি আপনার সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওড় দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওড় দিয়ে মেঘনাতে গিয়ে পড়ে। অথচ পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বা গতিকে আজকে বন্ধ করা হয়েছে। যার ফলে এভাবে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
'মুচলেকা' ও আ'লীগের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে যা বললেন ফখরুল:
মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমান লন্ডনে গেছেন এবং তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম হেসে দেন। এরপর তিনি বলেন, মুচলেকা দিয়ে ওয়ান ইলেভেনের পরে কে আমেরিকা গিয়েছিলেন, সেটা আমরা সবাই জানি। কী, জানি না?, জানি। নামটা নিতে চাই না।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেইমান হবে। এর দুই দিন পরে তিনি নির্বাচনে চলে গেছেন এবং জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন।
১২ বছর নিখোঁজ চৌধুরী আলম:
২০১০ সালের ২৫ জুন রাজধানীর ইন্দিরা রোড এলাকা থেকে কাউন্সিলর চৌধুরী আলমকে সরকারের নির্যাতনকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক যুগ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ সরকার তাঁর খোঁজ দিতে পারেনি। শুধু চৌধুরী আলমই নয়, ইলিয়াস আলীসহ কেবল বিএনপির ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাদের ১৫ বছরের দুঃশাসনে বাংলাদেশের কম মানুষ সন্তানহারা হয়েছেন, কতজন স্বামীহারা হয়েছেন, তার সঠিক কোনো হিসাব আমরা উপস্থাপন করতে পারছি না। শুধু গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য এই গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা করা—এটা কোনো সভ্য সমাজ-রাষ্ট্রে হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, শুধু গুমের ব্যাপার নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে এ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে এই সরকারকে ‘জনগণের শত্রু’ আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
এ সময়ে চৌধুরীর আলমের দুই ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী, আবু সাদাত চৌধুরী, দুই মেয়ে মাহমুদা আখতার, মাহফুজা আখতার ও চৌধুরী আলমের ছোটভাই খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন