শেখ পরিবারের কব্জায় দেশের রাজনীতি। পারিবারিক আধিপত্য বিস্তার করে লুটেপুটে খাচ্ছে দেশ। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে শেখ পরিবারের এই সদস্যরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজনীতি। দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে সরাসরি নেই। কিন্তু সুদুর আমেরিকায় বসে প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা হিসাবে মোটা অঙ্কের সম্মানী নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে ববি আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসাবে খ্যাত সিআরআই’র নেতৃত্বে রয়েছেন।
ভোট ডাকাতির সংসদে শেখ পরিবারের সদস্য ৯জন। এবং তাদের বাইরে আরো একাধিক আত্মীয় রয়েছেন জাতীয় সংসদে। এই সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির বিষয়টি দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। শেখ হাসিনার মিত্র হিসাবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ কান্ট্রি রিপোর্টেও উঠে এসেছে ভোট ডাকাতির প্রসঙ্গটি। দেশের ভেতরেও আওয়ামী লীগের অন্ধ সাপোর্টার সাংবাদিকের মুখেও ইদানীং শোনা যায় কিভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। এই ভোট ডাকাতির নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেখ পরিবারের ৮ জন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসাবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়ে আছেন তাদের সাথে।
নৌকা প্রতীকে বিজয়ী শেখ পরিবারের সদস্যরা হলেন-শেখ হাসিনা, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ হেলাল উদ্দিন, নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। এছাড়াও ফরিদপুর-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। এদিকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তাঁর ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ পরশ যুবলীগের সভাপতি।
এর মধ্যে শেখ সারহান নাসের তন্ময় শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে। আর শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল হলেন শেখ হেলাল উদ্দিনের ভাই। শেখ ফজলে নূর তাপস পরবর্তীতে ধানমন্ডির আসন ছেড়ে দিয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের বাইরে শেখ পরিবারের আত্মীয়দের মধ্যে রয়েছেন বাহাউদ্দিন নাসিম এবং শেখ হাসিনার বেয়াই ফরিদপুরের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী এসএম জিলানী পেয়েছেন ১২৩ ভোট। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ পরিবারের নতুন দুই সদস্য শেখ তন্ময় ও শেখ জুয়েল প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছেন।
শেখ হাসিনার ভাতিজা ও শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে শেখ তন্ময় বাগেরহাট-২ আসন থেকে নির্বাচন করেন। তিনি ২ লাখ ২১ হাজার ২১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এমএ সালাম পান ৪ হাজার ৫৯৭ ভোট।
শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ জুয়েল খুলনা-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। এই আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহন করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১ লাখ ১২ হাজার ১০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পান ২৭ হাজার ৩৭৯ ভোট।
গোপালগঞ্জ-২ আসনে শেখ ফজলুল করিম সেলিম পান ২ লাখ ৮১ হাজার ৯০৯ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তসলিম শিকদার পান ৬০৮ ভোট। বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম পান ২৮৬ ভোট।
শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে শেখ হেলাল। বাগেরহাট-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৪৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা পান ১১ হাজার ৪৮৫ ভোট।
শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র। নামের সাথে ব্যারিস্টার লাগানো আছে। তাই সুপ্রিমকোর্টে বিভিন্ন মামলায় ক্লায়েন্টের পক্ষে বিজয়ী হওয়ায় তার জুড়ি নেই কেউ।
শেখ হাসিনার ভাতিজা নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন মাদারীপুর-১ এবং ফুফাতো ভাই আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।
লিটনের ভাই নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে হারিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি যুবলীগের নেতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৭ ভোট পান। অন্যদিকে কাজী জাফর পান ৯৪ হাজার ২৩৪ ভোট। এর আগে ২০১৪ সালেও জাফরকে হারিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন নিক্সন চৌধুরী।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সমঝোতার ভোটে ক্ষমতায় এসেই জাতির পিতার সদস্যদের নিরাপত্তা আইন নামে একটি আইন তৈরি করেন শেখ হাসিনার সরকার। এই আইনের আওতায় আজীবন তারা রাষ্ট্রীয় খরচে এসএসএফ-এর নিরাপত্তা পাবেন এবং সরকারি বাড়িতে থাকবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন