সবে কুর্শি হারিয়েছেন ইমরান খান। কেন তার আকস্মিক পতন? সেনা সমর্থন প্রত্যাহার, মার্কিন ষড়যন্ত্র? নানা আলোচনা। তবে বসে নেই তিনি। ফিরে গেছেন রাজপথে। ছুটছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তার সমাবেশে যোগ দিচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। নানা তত্ত্ব হাজির করছেন তিনি। এরমধ্যে ঈদুল ফিতরের আগে তার দেয়া একটি বক্তব্য নিয়ে অনেক ট্রল হয়েছে বাংলাদেশেও। ফেসবুকের বাসিন্দারা করেছেন নানা মন্তব্য। কী বলেছিলেন ইমরান খান? তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, আগাম নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে তার দল।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী এই সদস্য করেন লেখালেখিও। একসময় যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতায়। প্রায় কাব্যের ভাষায় কথা বলেন, বিএনপি’র ঈদের পরের আন্দোলন নিয়ে। যদিও দলটির নেতারা এখন আর এ নিয়ে খুব বেশি মন্তব্য করেন না।
আরেকটি ঈদ শেষ হলো। কেমন হবে আগামী দিনের রাজনীতির চালচিত্র। খুব বেশি না হলেও এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। এক যুগ ধরে যেমনটা চলছে তেমনটাই চলবে? সবকিছু ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে? চলবে রোডম্যাপ অনুযায়ী। হতোদ্যম বিরোধী শক্তি আরও কোণঠাসা হবে? নাকি রাজনীতির ময়দানে নিজেদের অবস্থান ফিরে পাবে? বিরোধী নেতাদের নামে থাকা লাখ লাখ মামলার কি হবে? নির্বাচনের আগে এসব মামলা নিষ্পত্তি হবে? দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। কেমন হবে সে নির্বাচনের মডেল। ইভিএম কি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে? নিজেদের দাবি আদায় না হলে বিএনপি কি সে নির্বাচনে অংশ নেবে? বাকি বিরোধী দলগুলোর ভূমিকাও বা কি হবে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা কেমন হবে? গত দুই নির্বাচনের মতো? নাকি ভিন্ন কিছু। আগামী নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এরইমধ্যে কথা বলা শুরু করেছে। কিছুদিন আগে অনেকটা খোলামেলা বক্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। খুব বেশিদিন হয়নি তিনি ঢাকায় এসেছেন। গত মাসের শেষদিকে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট করেই বলছি, আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ বেছে নেবে না। আমরা শুধু এমন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আশা করি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কে দেশ পরিচালনা করবে।’’ কয়েকজন পশ্চিমা দূতও আগে-পরে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র ভারত এবং চীন এ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তাদের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লেখ না করলেও চলে।
দীর্ঘদিন থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সহসাই সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করতে পারে। দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা এ নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। রোজায় দলের শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে এ বছরের শেষদিকে। কিন্তু এখনই প্রায় নিয়মিত পত্রিকায় খবর বেরুচ্ছে কে হবেন দলটির আগামী সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে। ওবায়দুল কাদের কি পদে বহাল থাকবেন? না নতুন কেউ দায়িত্ব নিবেন? আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বিএনপি অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও তা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব এরইমধ্যে এটা খোলাসা করেছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর তারা জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। মূলত বিরোধী ছোট দলগুলোর অনেক নেতার নানা বক্তব্যের পর বিএনপি তার এই অবস্থান জানায়। একটি জাতীয় সরকারের ধারণা রয়েছে, বিএনপি ছাড়া অন্য বিরোধী নেতাদের কারও কারও মধ্যে। তারা মনে করেন, গণতান্ত্রিক শাসনের ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তা সংস্কারে জাতীয় সরকারকে সময় দিতে হবে। কীভাবে এ ধরনের সরকার গঠিত হবে জানতে চাইলে একটি দলের প্রধান বলেন, সময়ই সেটা ঠিক করে দিবে। প্রয়াত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে তা কেউই জানতেন না।
বিরোধীদের আন্দোলনের রূপরেখা পরিষ্কার না হলেও পর্দার আড়ালে তা নিয়ে এক ধরনের আলোচনা চলছে। যুগপৎ অথবা জোটবদ্ধ দুই ধরনের ফর্মুলা নিয়েও কথাবার্তা এগুচ্ছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, ‘‘সব দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আমাদের অবস্থানের বিষয়ে আমরা বলেছি, আলোচনার মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো আমরা সমাধান করবো। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধান হবে। কারণ এখানে তো দ্বিমত করার কোনো কথাই না। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারাই শামিল হবে তাদের নিয়েই একটি জাতীয় সরকার হবে। দেশের বর্তমান যে অবস্থা এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আমরা সকলেই ঐকমত্য পোষণ করছি। সুতরাং জাতীয় সরকারের মাধ্যমে এটা তো বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা বিএনপি একা কেন করবে। আমরা মনে করি সবাই মিলে এটা করা উচিত।’’
তবে সম্ভাব্য বিরোধী জোটে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে সংকট রয়েই গেছে। যদিও বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এখন অনেকটাই অকার্যকর। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপিরও যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবুও বিষয়টির সুরাহা কীভাবে হয় সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে পর্যবেক্ষকদের।
ওদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সাতটি দল ও সংগঠন। সম্প্রতি রাজধানীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বৈঠক করে এসব দল। এতে অংশ নেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা। সেখানে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে না মর্মে তারা ঐকমত্য প্রকাশ করেন।
জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ দলগুলোর অন্য নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তারা বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিষয়ে বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। এ অবস্থা বজায় রেখে সমমনা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি সংগঠন বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করছি দীর্ঘ সময় ধরে। আগামীতে আমরা আরও কীভাবে কাজ করতে পারি বিশেষ করে রাজনৈতিক অবস্থা, নির্বাচন এসব প্রসঙ্গে আমাদের একটা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান রয়েছে। দেশে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, সংবিধান সংস্কারসহ বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। মোটকথা একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা ঐকমত্য হয়েছি।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, অনেকদিন ধরেই আমরা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন রাজনীতি এবং এর করণীয় নিয়ে কাজ করছি। এর আগে হয়তো এটা সুনির্দিষ্টভাবে বাইরে আসেনি। আমাদের এই বৈঠকে একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণকে সংগঠিত করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে একটা গণআন্দোলন তৈরি করা। যেটার দাবি হবে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছে। তবে এই সরকারের মেয়াদ কতোদিন হবে এই বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত কিছুই বলবো না। আন্দোলনকারী দল এবং ব্যক্তিদের আলোচনার মধ্যদিয়ে ঠিক হবে যে, এটার মেয়াদ কী হবে। ঈদের পরে জনসম্পৃক্ত কিছু কর্মসূচি পালনের বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, এটাকে আমরা জোট বলবো না। কারণ এখানে রাজনৈতিক দল এবং কিছু সামাজিক সংগঠন রয়েছে কিংবা কিছু স্বাতন্ত্র্য ব্যক্তিও থাকবে। তাই এটাকে একটা মঞ্চ নাম দেয়া হতে পারে।
নোট: রাজনীতিতে ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা বহুক্ষেত্রে এক মাস আগেও বলা যায় না। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির চাকা সহসাই ঘোরা শুরু করতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন