সরকারবিরোধী বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আগামীকাল শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বৈঠকে বসছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে ওই ঐক্যপ্রক্রিয়ায় জামায়াতের অবস্থান কী হবে, বর্তমান বাস্তবতায় দলটিকে জোটে রাখা সম্ভব কি না, তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
গত সোমবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র কালের কণ্ঠকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সাধারণত প্রতি সপ্তাহের সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। কিন্তু বৃহৎ ঐক্য ও জামায়াত প্রশ্নে সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে শুক্রবার রাতে বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইন পাস হতে পারে আজ বৃহস্পতিবার। এ ব্যাপারে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য অভিন্ন হওয়া দরকার। আগামী দিনের কর্মসূচিও যুগপত্ভাবে হওয়া উচিত।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিগগিরই ঐক্যপ্রক্রিয়ার কাজ শুরু হবে। দু-এক দিনের মধ্যে আমাদের বৈঠক হবে। তখন আমরা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করব। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আশা করি, করোনার বিধি-নিষেধের সময়টাতেই ঐক্যপ্রক্রিয়ার কাজ শেষ করতে পারব। ’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধসহ সরকার বিধি-নিষেধ জারি করায় চলমান জেলাভিত্তিক সমাবেশ স্থগিত করে বিএনপি। এ সময়ে করণীয় ঠিক করতে সোমবার স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দুই ইস্যুতে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোসহ কয়েকটি ইস্যু সামনে চলে আসায় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এখন তাঁরা নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। এ লক্ষ্যে ১১ দফার একটি খসড় রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে।
সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির কয়েকটি সভায় জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে জামায়াতের বিষয়টি সামনে আসে। বিশেষ করে, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থান এবং তাদের ব্যাপারে বিশ্ব মোড়লদের অবস্থান ও ভূ-রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসে, সেদিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে জামায়াতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে মত দেন নেতারা।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত জোটের সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশি-বিদেশি অনেকেই বিএনপির সমালোচনা করে আসছে। এ কারণে জোটগতভাবে ‘শক্তিশালী’ আন্দোলন করেও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শক্তির সমর্থন না পাওয়া এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে অনেকের দাবি ও মতের মিল হলেও জামায়াত থাকায় কয়েকটি দল তাদের সঙ্গে ঐক্যে আসছে না। তবে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা যেভাবে ঐক্যপ্রক্রিয়া গড়তে চাইছেন, তাতে জামায়াতের ব্যাপারে সমস্যা হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ জামায়াতের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে—এমন আলোচনা স্থায়ী কমিটিতে হয়েছে। তবে জামায়াতকে ছাড়লে বিএনপির সুবিধা কী, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। শুক্রবারের বৈঠকে সেই আলোচনাও হতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন