যুক্তরাষ্ট্রে সরকারবিরোধী প্রচারের জন্য লবিস্ট ফার্মকে বিএনপি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা সাড়ে ৩১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রমাণ হিসেবে লবিস্ট ফার্ম বিষয়ক কিছু তথ্য-উপাত্তও তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এর বিপরীতে সরকার কোনো লবিস্ট ফার্ম বা তদবিরকারী নিয়োগ করেছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সরকার বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেনি। তবে জনসংযোগের (পাবলিক রিলেশন্স, সংক্ষেপে পিআর) জন্য পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। আর এর জন্য প্রতি মাসে সরকারকে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের নিয়োগ করা পিআর প্রতিষ্ঠানটি লবিস্ট ফার্ম কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে শাহিরয়ার আলম বলেন, লবিংয়ের উদ্দেশ্যে সরকার কোনো ফার্ম নিয়োগ দেয়নি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের বহুমুখী ভূমিকা থাকতে পারে। বাংলাদেশ সরকার শুধু জনসংযোগের কাজটিই ওই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করাচ্ছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো মার্কিন লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারের পরিকল্পনা নেই।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গত সোমবার সংসদে বলেছিলেন, বিএনপি-জামায়াত গত পাঁচ বছরে যত লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে, প্রতিটির টাকা-পয়সার হিসাব আছে। শাহিরয়ার আলমসহ সরকারদলীয় অন্য সদস্যরা বিদেশে বিএনপি-জামায়াতের লবিস্টদের পেছনে ব্যয় করা টাকার তদন্ত দাবি করেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে ভাড়া করা লবিস্ট ফার্মগুলো বাংলাদেশ ও সরকারের বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করবেন, দুটি প্রতিষ্ঠানের পেছনে বিএনপির খরচ করা ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার বৈধ পথে গেছে কি না, তা যেন খতিয়ে দেখা হয়।
শাহিরয়ার আলম বলেন, লবিস্ট নিয়োগ করা বেআইনি নয়। তবে এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে, লবিস্টের পেছনে ব্যয় করা টাকা বৈধ পথে গেছে কি না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে বিএনপি যে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী জমা দেয়, সেখানেও এই লবিস্টের পেছনে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ আছে কি না, তা-ও নির্বাচন কমিশনের দেখা উচিত।
শাহিরয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনে বিএনপি-জামায়াতের বিদেশে লবিস্টসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তিনি পাঠাবেন।
এদিকে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহ্মুদও গতকাল বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘বিএনপি অবৈধ অর্থ ব্যয় করে দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে, এ দেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকে কি?’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট, বিশেষ করে বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত-এই কথাটা আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। তার পরও হয়তো অনেকের মনে নানা প্রশ্ন ছিল। এখন তা পরিষ্কার হচ্ছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি দেশে তাদের অফিসের ঠিকানা দিয়ে চুক্তি করে বিদেশি লবিস্ট ফার্মকে লাখ লাখ ডলার দিচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে তারা যে ব্যয়ের হিসাব দিয়েছে, সেখানে তো এই হিসাব দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের উচিত তাদের তলব করা। দ্বিতীয়ত, এই লাখ লাখ ডলার তারা কোথা থেকে পায়, কোথা থেকে আসে, সেটিও তো তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমি মনে করি, এখানে দুদকেরও ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আয়কর বিভাগ থেকেও এ বিষয়ে তদন্ত এবং তাদের তলব করা প্রয়োজন। অর্থাৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং সেটার দালিলিক প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। যে রাজনৈতিক দল দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সেই দলের কি দেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে!’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন