চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনে কমিটি গঠনের পর বিবদমান দুই পক্ষের নেতারা নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করেছেন। আগামী শুক্রবার ছয় সদস্যের কমিটির প্রথম বৈঠকে বসার কথা। বৈঠকে নগরের সাংগঠনিক ১৪ থানা কমিটির কার্যক্রম তদারকিতে পৃথক কমিটি করার কথা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে শুক্রবারের বৈঠকের পর নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা চট্টগ্রাম ফিরে সংগঠনকে আরো গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে নগর নেতাদের ১৪ সাংগঠনিক থানা কমিটির কার্যক্রম তদারকির জন্য আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার ধানমণ্ডির দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর সোমবার একসঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফেরেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও সুনীল সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আগের দিন রবিবার চট্টগ্রামে ফেরেন সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, জহিরুল আলম দোভাষ ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর থেকে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে নগরের জ্যেষ্ঠ নেতারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়র রেজাউল করিমের বাসভবনে ঢাকায় গঠিত ছয় সদস্যের তদারক কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে নগরের সাংগঠনিক ১৪ থানা কমিটির সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি থানায় একটি কমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটিতে প্রধান করা হবে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাকদের। তাঁদের নেতৃত্বে নগর কমিটি থেকে আরো তিন থেকে চারজনকে রাখা হতে পারে।
জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা চট্টগ্রাম মহানগরে সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামী শুক্রবার আমরা প্রথম বৈঠক করব। সেখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য সবাই একযোগে কাজ শুরু করব। আমাদের লক্ষ্য সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে তৃণমূলকে আরো জোরদার করা।’ ইউনিট সম্মেলন চলমান থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ইউনিট সম্মেলন চলতি মাসে শেষ করে আগামী মাসে আমরা ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করব। ওয়ার্ড সম্মেলন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে হবে। ওয়ার্ডের পর আমরা থানা সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়েও এগোচ্ছি।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘ইউনিট সম্মেলন ঘিরে অগণতান্ত্রিক ও সাংগঠনিক পরিপন্থী কিছু কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছিলাম। রবিবার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনার পর একটা সমাধানে এসে পৌঁছেছি। ১৪ থানার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মনিটরিং কমিটি হবে।’
একই কমিটির সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। কৌশলগত দূরত্বও ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এখন আর কারো সঙ্গে কোনো ভেদাভেদ ও দূরত্ব নেই। সবাই একসঙ্গে কাজ করে যাবে।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কমিটির মধ্যে ছয়টি শূন্যপদ আছে। এর মধ্যে দুজন অসুস্থতার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সময় দিতে পারছেন না। বিভিন্ন পদে থাকা বাকিদের নিয়েই ১৪ সাংগঠনিক থানার তদারক কমিটি গঠন করা হবে।
২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। চার বছর আগে মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর কেন্দ্র থেকে প্রথম সহসভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নগরের অধীনে তৃণমূলের (ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা) কমিটিগুলোর সম্মেলন হচ্ছে না। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে ইউনিট সম্মেলন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ১২৯টির মধ্যে শতাধিক ইউনিট সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। এসব সম্মেলন ঘিরে হঠাৎ নগর আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা গত তিন সপ্তাহে একাধিক বৈঠক করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন