নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইভীকে কোণঠাসা করতে গিয়ে নিজেই ধোঁকা খেয়েছেন শামীম ওসমান এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষণরা। এই নির্বাচনে শামীম ওসমান একূল-ওকূল দুকূলই হারিয়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা এবং রাজনৈতিক সচেতন মহল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে ১৬ জানুয়ারি। এই নির্বাচনে আইভী ৬৬টি হাজারের বেশি ভোটে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে পরাজিত করেছেন। নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠ নিরপেক্ষ। সতেরো দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় কোন বড় ধরনের বিপত্তি ঘটে নি। এমনকি ভোটের দিনও কোথাও কোনো সহিংসতা বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়নি। যদিও তৈমুর আলম খন্দকার অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে ইভিএমে কারসাজি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সকলে মনে করে যে ইভিএম এর কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে। এই নির্বাচনের পর পর সেলিনা হায়াৎ আইভী তৈমুর আলম খন্দকারের কাছে গেছেন এবং তার দোয়া চেয়েছেন। তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন যে তার অদৃশ্য হাত সবসময় আইভীর মাথার উপরে থাকে। সেখানে চাচা ভাতিজির মিলন এবং দুইজনের সম্প্রীতি রাজনীতিতে একটি শুভ ইঙ্গিত দিয়েছে।
কিন্তু আইভী এবং তৈমুর আলম খন্দকারের এই মিলন এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা শামীম ওসমানকে রাজনীতিতে কোণঠাসা করে ফেলল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। শামীম ওসমান এই নির্বাচনে কোনো পক্ষ ছিলেন না। কিন্তু তার সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ছিল। অনেকেই মনে করেন যে, এই নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রার্থী করার পিছনে শামীম ওসমানের ভূমিকা ছিল এবং শামীম ওসমানের পছন্দের একজন ব্যবসায়ী যিনি নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের একজন হর্তাকর্তাও বটে তিনি তৈমুর আলম খন্দকারকে অর্থ জুগিয়েছিলেন নির্বাচন করার জন্য। ঐ কারণেই এই নির্বাচনের প্রচারণা শুরু থেকে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠদেরকে তৈমুর আলম খন্দকারের পাশে দেখা গেছে এবং এই নির্বাচনে যেন তৈমুর আলম খন্দকার কোনো বাধাগ্রস্ত না হন সেটিরও চেষ্টা করা হয়েছে। এটি কি আইভীর রাজনৈতিক কৌশল ছিল?
কারণ, আইভীর সঙ্গে তৈমুর আলম খন্দকারের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের পুরনো এবং নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ, বিএনপির রাজনীতির বাইরে একটি বড় রাজনীতি আছে ওসমান পরিবার বনাম বনাম অন্যান্য। আর সেই ওসমান পরিবার বনাম অন্যান্যের যে রাজনৈতিক মেরুকরণ সেখানে তৈমুর আলম খন্দকার এবং আইভী একই শিবিরে বসবাস করেন। নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাহলে কি শামীম ওসমানকে ধোঁকা দেওয়া হলো। তৈমুর আলম খন্দকার কি দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শামীম ওসমানের আসল চেহারাটা উন্মোচন করলেন। এখন শামীম ওসমান আওয়ামী লীগে যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়লেন তেমনি নারায়ণগঞ্জের আধিপত্য হারালেন। গত কিছুদিন ধরেই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। আগে সব ব্যাপারে তিনি যেমন দলের আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সহানুভূতি পেতেন তা এখন অনেকাংশেই কমে গেছে। সে কারণেই এবার নির্বাচনে তিনি চেয়েছিলেন আইভীকে উপড়ে ফেলতে। কিন্তু উপড়ে ফেলতে যেয়ে তিনি একাধিক ভাবে বিপদে পড়লেন।
প্রথমত, তিনি তৈমুর আলম খন্দকারকে সামনে এনে নিজের অবস্থাটা পরিষ্কার করলেন। দ্বিতীয়ত, তৈমুর আলম খন্দকার আসলে আইভীরই বিজয় চেয়ে ছিলেন। তৈমুর আলম খন্দকার যে আসলে আইভীর পক্ষে খেলবেন এটি শামীম ওসমানের মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ বুঝতেই পারেননি। ফলে তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ঠিকই কিন্তু কখনোই আইভীকে হারিয়ে দিবেন এরকম মানসিকতা দেখাননি। অন্যদিকে আইভী এবং তৈমুর আলম খন্দকার একাট্টা হয়েছিলেন এই নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করে নারায়ণগঞ্জকে শান্তির শহর বানানোর ব্যাপারে এবং এই শান্তির শহর বানানোর ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রধান বাঁধা ওসমান পরিবার। এই নির্বাচনে পর এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আনছেন এবং নারায়ণগঞ্জে ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন নারায়ণগঞ্জে শুদ্ধি অভিযানের এখনো অনেক বাকি। তাহলে কি শামীম ওসমানকে কোণঠাসা করার জন্যই তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনী যুদ্ধে নেমেছিলেন? শামীম ওসমান কি নারায়ণগঞ্জে ধোঁকা খেলেন এই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন