নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ এর যে খসড়া অনুমোদন করেছে তাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন হবে না বলে মনে করছ বিএনপি।
তাদের ভাষ্য, ইতিপূর্বে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি যে ইসি নিয়োগ দিতেন তাকে আইনি ভিত্তি দিতে সরকার ইসি গঠনে আইন করতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার যে নতুন ষড়যন্ত্র করছে এটি তারই অংশ। সোমবার দেশ রূপান্তরকে এসব বলেছেন বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক।
ইসি গঠনে নতুন আইনের যে খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সরকারকে অভিযুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে যে মৃত্যুর ঘটনা ও সহিংসতা ঘটেছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এসব থেকে রেহাই পেতে সরকার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। নানামুখী চাপের কারণে তারা তড়িঘড়ি করে ইসি গঠনে আইন করতে যাচ্ছে। এতে কোনো লাভ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন যদি আইনই করবে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংলাপ করলেন কেন। অবশ্য রাষ্ট্রপতির সংলাপে কোনো ফল বয়ে আনবে না এমন অভিযোগে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করেছে। আর আইন হলেও দেশের জনগণের কোনো লাভ হবে না। কারণ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেব না। এটা আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ এর খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির মাধ্যমে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, এতদিন যে প্রক্রিয়ায় ইসি নিয়োগ দেওয়া হতো তা ছিল অসাংবিধানিক। এখন রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলীয় মনোভাবাপন্ন লোককে দিয়ে ইসি নিয়োগের প্রতিক্রয়াকে আইনগত ভিত্তি দিতে অপচেষ্টা করছে সরকার। এতে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অভিপ্রায় বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত না নিয়ে শুধু নিজেদের ইচ্ছায় যে আইন করতে যাচ্ছে সরকার তা দুরভিসন্ধিমূলক। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র।’
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের সুশীল সমাজ আগেই ইসি গঠনে আইন করতে বলেছিলেন। তখন সরকার তাদের সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়নি। এখন নানামুখী চাপে সরকার তড়িঘড়ি করে নতুন আইন করতে যাচ্ছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক। নতুন আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি গঠন করবেন তা আগের মতোই হবে। নতুন কিছু হবে না। এটা হবে নতুন বোতলে পুরান মদ দিয়ে ভর্তি করার মত।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এসব কোনো কিছুর সঙ্গে নেই। আমরা আগেই বলেছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার গঠন করতে হবে। সে সরকার নতুন ইসি নিয়োগ দেবেন। সেই ইসির অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে যে নির্বাচন হবে সেটাই হবে প্রকৃত নির্বাচন। সে নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিক ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা বলেছিলেন। গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন তখন ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে অবিলম্বে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিল।
সে সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ইসি নিয়োগে আইন করলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ যে সংসদে এ আইন পাশ করবে সে সংসদ তো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। রাতের ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা সংসদে এসেছিলেন।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন