তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাগুরার মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলায় আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের একেবারেই নাকাল অবস্থা। প্রতিটি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। আর পেছন থেকে শক্তি জোগাচ্ছেন নিজ দলের পদস্থ নেতারা।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নৌকার বিজয়ে প্রার্থীকে বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
২৮ নভেম্বর মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ৮টি এবং শালিখা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে মহম্মদপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছেন একই দলের ১৫ জন এবং শালিখা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী।
এ ছাড়াও মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা এবং শালিখা উপজেলার বুনাগাতি এই দুটি ইউনিয়ন ছাড়া সব ইউনিয়নেই রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের প্রার্থী। যাদের এই দুটি উপজেলাতেই রয়েছে শক্ত অবস্থান। পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত ১২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
তবে হামলা মামলার ভয়ে তাদের সমর্থিতদের অনেকেই নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন না। বরং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারণায় তাদের অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। আবার কৌশলগত কারণে গোপনে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন।
এ অবস্থায় নৌকা প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে বিএনপি সমর্থিত ভোটাররাই মূল ভূমিকা রাখবে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
মহম্মদপুর উপজেলার উল্লেখযোগ্য একটি ইউনিয়ন নহাটা। এখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আলী মিয়া। বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী লিটনকে মনোনয়ন না দেওয়ায় দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে তাকে খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে লিটন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামী পরিবারের সদস্য নহাটা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তৈয়বুর রহমান তোরাপ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যেই সেখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মীই তার পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।
এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের অপর প্রার্থী জাসদ সমর্থিত অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তবে এখানে বিএনপি সমর্থিত কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা মার্কার বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে।
ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলী মিয়ার বক্তব্যে তার সত্যতাও ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির ২০ জনের মধ্যে ১৪ জনই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। যে বিষয়ে স্থানীয় এমপি এবং উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে নহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, দাউদ হোসেন বিশ্বাস, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ইছাহাক শেখসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আলী মিয়া নানাভাবে বিএনপি কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছেন। অন্যদিকে নিগৃহীত ও অপদস্থ হয়েছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। যে কারণেই তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বিধায় তারা বাধ্য হয়েই দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে তার নৌকার নির্বাচন করছেন কেবল বিএনপির কর্মীরাই।
একই অবস্থা মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নেই। কোথাও প্রকাশ্যে কোথাও গোপনে আওয়ামী লীগের পদস্থ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুণ্ডু বিদ্রোহীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তাদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। বিধায় ২৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন