নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। এছাড়াও চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমালোচনাও করেছেন তিনি।
তবে আইনগতভাবে কোনো সংসদ সদস্য এটা করতে পারেন না জানিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল কাদির।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
একই মঞ্চে সেলিম ওসমানের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তারা হলেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ ও মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ গাজী সালাম।
ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২১ উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। যার মধ্যে বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের এমপি সেলিম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, 'কলাগাছিয়ায় আমার মানুষ লাঙ্গল নিয়ে দাঁড়িয়েছে দেলোয়ার হোসেন। আমি আপনাদের কাছে তাদের জন্য দোয়া চাই। একজন সংসদ নির্বাচনের কথা বলতে পারে না। কিন্তু কলাগাছিয়ায় যদি উন্নয়ন চান তাহলে দেলোয়ারকে নিয়ে যেই উন্নয়ন অসমাপ্ত আছে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করা হবে।'
সেলিম ওসমান আরও বলেন, 'আমাদের কোনো ভুল বা পাপ আছে। আমরা ইলেকশন আসলেই একসাথে থাকতে পারি না। যেমন আজকেও একসাথে নাই। আজকে কেন নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছে? আরে আপনি (বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান) নিজেও তো উইদ আউট নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে বসে আছেন। আমরা যদি একসাথে বসতাম বন্দরে কোনো মেম্বার ইলেকশনও হতো না। দুই একজন মানুষ শান্তিতে থাকতে চান না, শান্তি দিতে চান না। একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি দেলোয়ারের কথা ঘোষণা করেছি। উনিও হাত পা ছুড়ে দেলোয়ারকে সমর্থন করেছেন। হঠাৎ করে চাবি খেয়ে আজকে নৌকা হয়ে গেলেন। শ্রমিক নেতা, তিতাস গ্যাসের নেতা, বাড়িতে বাড়িতে লাইন দিয়া বন্দরের মানুষকে ১২টা বাজায়া নেতাগিরি করে। পয়সা কামাইসে সেই পয়সা এখন খরচ করতে হবে। হারামের পয়সা ব্যারামে খায়। উনার ব্যারামের পয়সা ইলেকশনে খরচ করছে। আমার দেলোয়ারের কোনো পয়সা খরচ করতে হবে না। ইনশাআল্লাহ আমার ও আমার পরিবারের দোয়া দেলোয়ারের সাথে থাকবে। জয়ী দেলোয়ার হবেই। দেলোয়ারের সাথেই কলাগাছিয়ার উন্নয়ন হবে।'
তিনি বন্দরে তার পক্ষের চেয়ারম্যান ও প্রার্থীদের জয়যুক্ত করার জন্য বলেন, 'এই বন্দর ইউনিয়নে লাঙ্গল প্রার্থী এহসান উদ্দিন আহমেদ। আপনারা তাকে জয়ী করবেন। মুছাপুর ইউনিয়নে আরেক লাঙ্গল প্রার্থী মাকসুদ। মদনপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী এম এ গাজী ছালাম, ও দুষ্ট হলেও ওরে আমার দরকার। ওরে ছাড়া ওই এলাকা আমার চলবে না। আর ধামগড়ে আরেক নৌকার প্রার্থী মাসুম আহম্মেদ তো আছেই।'
আচরণবিধি ভঙ্গের কথা স্বীকার করে সেলিম ওসমান বলেন, 'করোনায় আমাদের একটা যুদ্ধের মধ্যে চলতে হচ্ছে। এই যুদ্ধের মধ্যে আমাদের কাজ করা। আর তাই আমি আইন ভঙ্গ করে বলেছি আমার ৭টা চেয়ারম্যান আল্লাহ যেন আমাকে দেন। আর আপনারা যেন ভোট দিয়ে এই ৭টা চেয়ারম্যানকে জয়যুক্ত করেন।'
ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষে এমপি ভোট চাইতে পারেন কিনা- জবাবে বন্দর উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল কাদির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমপি সাহেব এটা করতে পারেন না। এমপি সাহেব ভোট চাইতে পারে না। এখানে বলা আছে যারা গুরুত্বপূর্ণ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছে তারা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা করতে পারবেন না। সেটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।'
এমপি সেলিম ওসমান ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন- জবাবে তিনি বলেন, 'আইনগতভাবে এমপি এটা করতে পারেন না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন