মিনার রশিদ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে ভার্চূয়াল মতবিনিময়ের সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন । তিনি নব্বই দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে অনুসরন করে বর্তমান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুগপদ আন্দোলনের জন্যে দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন । বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করবে না । আধিপত্যবাদ ও তাদের এদেশের দোসরদের বিরুদ্ধে তাঁর ও দলের অবস্থানটিও তিনি স্পষ্ট করেছেন !
এই দেশটি যদি আজ স্বাভাবিক থাকতো , এই রাষ্ট্রের সকল অঙ্গগুলি যদি স্বাভাবিক কাজ করতো এবং আমাদের সামগ্রিক বুদ্ধিমত্তা ও হুঁশ যদি স্বাভাবিক থাকতো তবে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ বিরোধী দলের নেতার এই কথাগুলিও দেশের সর্বত্র আলোচিত বা সমালোচিত হত ।
আমাদের আশি বছরের বুড়া আগাচৌ পরীমনির উন্মুক্ত উরু দর্শনে মজনুন হয়ে এক কবিতা লিখে ফেলেছে ! পশ্চিম বাংলার নায়িকা নুসরাতের ছেলের বাবা আসলে কে এই গবেষণায় আমাদের আলো-স্টার- যুগান্তররা নিজেদের সমস্ত মগজ খরচ করে ফেলেছে । এসব নিয়ে আলোচনা / সমালোচনার ফুরসত তাদের কই ?
সরকার তারেক রহমানকে কতটুকু ভয় পায় সেটা মালুম করা যায় আদালতের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেখে ! বিশ্বের মধ্যে তারেক রহমানই সম্ভবত একমাত্র নেতা যার বক্তব্য প্রচারে আদালতের এরূপ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ! সরকারের এমন কোনো খায়েশ বাকি নেই যা এই আদালতের মাধ্যমে পূরণ হয় নাই ।
আদালতের পর এবার জাতীয় প্রেস ক্লাবকেও তারেক রহমানের বক্তব্য চাপা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফ্রিডম অব প্রেসের চটকদার কথা যারা বলেন সেই জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি জানিয়েছেন , ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমানের সঙ্গে মত বিনিময় আইন বহির্ভূত । প্রেস ক্লাব সভাপতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের কথাটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয় । এব্যাপারে প্রেসক্লাবের নাম ব্যবহার না করতে সবাইকে সতর্ক করা হয় ।
এসব নিয়ে আলোচনা এদেশে অর্থহীন !
এখন থেকে কয়েকটি পর্বে বিষয়গুলি নিয়ে একটি নির্মোহ ও ধারাবাহিক আলোচনার চেষ্টা করবো । আপনারাও আপনাদের সুচিন্তিত মতামত কমেন্টে রাখুন । বিএনপি জামায়াত সহ অন্যান্য দলের টপ নেতৃত্বকে অনুরোধ করব উনারা যেন আপনাদের এই সুচিন্তিত মতামতগুলি পড়ে নিজেদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন । ডিজিটাল দেয়ালের এই লিখনগুলি পড়া / দেখা নেতৃত্বের জন্যে খুবই জরুরি । নিজ নিজ বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে ও স্পষ্ট করে উল্লেখ করুন । প্রতিপক্ষের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে নিজের মন্তব্য পেশ করুন ।
আমরা দেখেছি যে চতুর আওয়ামী মেশিনারিজ কিছু নেরেটিভ /বয়ান প্রতিপক্ষের মুখে তুলে দেয় এবং সেসব তারা বেশ ভালোভাবেই গলাধকরণ করে বসে । এই সব বয়ানের অন্যতমটি হলো , সরকারের ফ্যাসিবাদি নিপীড়নকে মানুষের চিন্তা / ভাবনা থেকে সরিয়ে দেয়া এবং বিরোধী দল ও তাদের নেতৃত্ব সম্পর্কে নেতিবাচক একটি ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া । অনেক বড় বড় বিশ্লেষকও ফ্যাসিবাদের এই বুদ্ধিবৃত্তিক কারসাজিতে কুপোকাত হয়ে পড়েন ! ফলে যে সম্মিলিত শক্তি বা ফোর্স ফ্যাসিবাদ উৎখাতে ব্যয় হতো সেই শক্তি পারস্পরিক কাঁদাছূড়ায় বা আভ্যন্তরিন হতাশা সৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে পড়ে । এতে শেষমেষ লাভবান হয় ফ্যাসিবাদ । এই সব বিশ্লেষক / সমালোচক বন্ধুরা মানতে চান না যে একটি রাষ্ট্রশক্তি ফ্যাসিবাদের হাতে পড়লে এমন কোন পাহলোয়ান পাওয়া যাবে না যে বন্দুকের গুলির সামনে দাঁড়বে । এছাড়া এটা পৃথিবীর তাবদ মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি , না খেয়ে মরবে তবুও গুলি খেয়ে মরবে না ! সবার প্রতি অনুরোধ , আরেকটু দরদ দিয়ে সমস্যাটির গভীরে প্রবেশ করুন , সমস্যার রুট কজটি বের করুন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাইয়রিটি সেট করে সে হিসাবে নিজ নিজ ক্যামপেইন শুরু করুন । হতাশায় , লোভে কিংবা নিরপেক্ষ সাজার ফ্যাশনে যেন এমন কিছু করে না বসি যাতে ফ্যাসিবাদের হাত টি আরও শক্তিশালী হয় !
বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব সম্পর্কে যে বড় অভিযোগটি তোলা হয় - বিএনপি তার মূল রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যূত হয়েছে , ইন্ডিয়াকে খুশি করে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
আমরা এখানে রাজনৈতিক আদর্শ এবং রাজনৈতিক কৌশলকে গুলিয়ে ফেলছি । একটা হলো ভিশন অন্যটা মিশন । মিশন পরিবর্তিত হতে পারে , ভিশন নয় । শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজেও ইন্ডিয়ার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিলেন । তিনি ইন্ডিয়া সফরে গেলে তখনকার প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট উভয়েই বিমানবন্দরে এসে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ! আবার যখন দেশের স্বার্থ হুমকির মুখে পড়েছে তখনই রুখে দাঁড়িয়েছেন ।
শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষ্যে জনাব তারেক রহমানের প্রদত্ত ভাষণটি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ।তাঁর ঐ ভার্চূয়াল ভাষণে অনেকগুলি প্রশ্নের জবাব উঠে এসেছে । এই বক্তব্যগুলি আগামী দিনের রাজনীতির প্রধান নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে । বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রথম শহীদ হিসাবে ঘোষণা করেছেন । তাঁর এই ঘোষণাটিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ বহন করছে ! তিনি পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তির উথ্থানের
কথাও স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন । এই কথাগুলি উচ্চারণের সময় তিনি যে ভয় পেয়েছিলেন - এমনটাও মনে হয় নাই ।ফেলানীর হত্যাকারীদের সম্পর্কেও তিনি উচ্চকন্ঠ ! তিনি তাঁর সমর্থক গোষ্ঠির রাজনৈতিক পাল্স সম্পর্কে পুরাপুরি ওয়াকেবহাল বলেই মনে হচ্ছে ।
( লেখাটির বাকি অংশ পরের সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে )
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন