শেখ হাসিনার গুম-খুনের রাজনীতি-৩৭
আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাই তারেক সাঈদ কে না চেনেন! নারায়ণগঞ্জে টাকা খেয়ে সাত খুনের মামলায় এখন মৃত্যুদণ্ডের খগ্ড় তার মাথায়। তিনি কি শুধু এই সাত খুনই করেছেন? এই সাত খুনের আগে কি তিনি নিষ্কলুষ ছিলেন? ডেথ স্কোয়াড র্যাবে দায়িত্ব পেয়ে বিরোধী দলের আঞ্চলিক পর্যায়ের অনেক বড় নেতাকে নির্মমভাবে গুম অথবা হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
‘শেখ হাসিনার গুম-খুনের রাজনীতি’- এর গত পর্বে বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদের হাতে সাবেক একজন এমপি এবং তার সহযোগী আরেক বিএনপি নেতা গুমের বিষয় তুলে ধরেছিলাম।
লক্ষ্মীপুরে এক চিকিৎসককে গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগও রয়েছে খুনী এই বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
র্যাবকে কাজে লাগিয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞের এক করুণ প্রতিবেদন আজকের পর্বে তুলে ধরা হলো।
যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল ডা. ফয়েজকে:
২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারেক সাঈদের নেতৃত্বে র্যাব-১ এর সদস্যরা লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. ফয়েজ আহমেদকে (৫৮) ধরতে শহরের উত্তর বাজারে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। র্যাব সদস্যরা রাত সোয়া ১২টার দিকে ডা. ফয়েজের বাড়ীর দরজা ভেঙে ঢুকে। তারা ডা. ফয়েজকে শয়নকক্ষ থেকে ধরে বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। এরপর নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করে।
তারেক সাঈদের নেতৃত্বে র্যাবের অভিযানকালে ডা. ফয়েজ আহমেদ তাঁর শয়নকক্ষে ছিলেন। র্যাবের খুনীরা ডা ফয়েজকে শয়নকক্ষ থেকে বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। তারেক সাঈদের নির্দেশে প্রথমে বেদম মারধর করে র্যাব সদস্যরা। এরপর ডা. ফয়েজের পা ও মাথায় পর পর কয়েকটা গুলি চালায় তারা। গুলিতে মারাত্মক আহত ডা. ফয়েজকে বাড়ির ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়া হয়। ঘটনাস্থলেই নির্মমভাবে শহিদ হন ডা. ফয়েজ।
র্যাব সদস্যরাই লাশ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফয়েজ আহমদের স্ত্রী মার্জিয়া বেগম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, রাত ১২টার দিকে দু-তিনটি গাড়ি নিয়ে র্যাব সদস্যরা এবং মুখোশধারী কয়েজন তাঁদের বাসভবনের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা ফয়েজ আহমদকে জোর করে ছাদে নিয়ে গিয়ে মাথায় গুলি করে সেখান থেকে ফেলে তাঁকে হত্যা করেন। এ সময় র্যাব সদস্যরা তাঁর ছেলে মো. বেলালকেও খোঁজাখুঁজি করেন এবং দেখামাত্র গুলি করার হুমকি দিয়েছিলেন।
স্বজনদের ধারণা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা মুখোশ পরেছিলেন। কারণ তারাই ডা. ফয়েজ আহমেদের বাসা চিনিয়ে দিয়েছিলেন।
২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর দশম প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একতরফা নির্বাচনের আগে-পরে লক্ষ্মীপুরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ১০ জন নেতা-কর্মীকে এভাবেই নির্মমভাবে হত্যা করেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, যার সামনের কাতারে ছিল র্যাব।
বাবাকে গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে দেয় তারেক সাঈদ:
শহিদ ডাঃ ফয়েজের ছেলে বেলাল ভুইয়া ভয়াবহ সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন, তাদের বাসায় র্যাব অভিযান চালালে তিনি ভবনের কার্নিশে আশ্রয় নেন। এ সময় তার বাবাকে তিন তলার ছাদে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা।
কার্নিশে বসেই বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখেছেন বলে হতভাগ্য এই পুত্র।
বেলাল সেই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে সেই ভয়াবহ অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলেন।
বেলাল গণমাধ্যমকে বলেন, এই সময় আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। র্যাবের অভিযান টের পেয়ে আমি ছাদের উপরে উঠে আমি কার্নিশে আশ্রয় নেই। কিছক্ষণ পরে দেখি তারা আব্বুকে ছাদে নিয়ে এসেছে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ তারা আব্বুকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং আমাকে খোঁজাখুঁজি করেছে। তারেক সাঈদ তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিল। ছাদে উঠে সে আব্বুকে গুলি করে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লক্ষ্মীপুর বরাবরই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই জেলার চারটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। জামায়াতের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী-সমর্থকও রয়েছেন এই জেলায়।
২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জেলাটিকে একরকম বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।
তাদেরকে দমন করতেই ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর র্যাব-১১ এর খুনী সদস্যরা সেখানে যায়। জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন