হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারী নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রবিবার (২ মে) রাতে তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় যান। রাত ১০ টা থেকে সাড়ে ১০টার পর্যন্ত তারা মন্ত্রীর বাসায় অবস্থান করেন। তবে সাক্ষাতের বিষয়ে কোনও ধরনের মন্তব্য করেননি তারা।
'শফী কমিটি'র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা হাসনাত আমিনী, মাওলানা আলতাফ, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী মন্ত্রীর বাসায় যান। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এ বিষয়ে জানাননি হেফাজত নেতারা।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় সাক্ষৎ করতে গিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত বাবুনগরী-মামুনুল কমিটির নেতারা। সেদিন গিয়েছিলেন হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজীসহ অন্তত ১০ জন শীর্ষ নেতা।
জানা গেছে, হেফাজতের বর্তমান কমিটি বিলুপাতির পর নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন আহমদ শফীপন্থী আলেমরা। নতুন করে হেফাজতকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এজন্য নেতারা সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বিতর্কিত কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যস্ত সংগঠন গোছাতে। এমনকি ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের চাঙা করে মাঠে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।
জুনায়েদ বাবুনগরীর কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারী হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, 'আল্লামা আহমদ শফীর গঠন করা কমিটি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। সিনিয়র নেতা ও দেশের শীর্ষ আলেমদের নিয়ে দ্রুত বৈঠক হবে। ওই বৈঠক থেকে হেফাজতে ইসলামের পুনর্জাগরণের ঘোষণা দেওয়া হবে'।
বর্তমান কমিটি সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনে হয়নি দাবি করে মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, 'বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটিতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। তারা আলেম-উলামাদের সরকার ও সহিংসতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এটা আল্লামা শফীর আদর্শচ্যুতি এবং তাঁর সঙ্গে গাদ্দারি। এটি করা হয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য'।
নতুন কমিটি দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, হেফাজতের মূল কমিটি ছিলো আহমদ শফীর গঠন করে যাওয়া কমিটি। ফলে, আহমদ শফীর মৃত্যুতে আমিরের যে পদটি খালি আছে, তা সংগঠনের অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে পূরণ করা হবে। আর এই কমিটিতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। এতে আহমদ শফীর আদর্শ মেনে বাবুনগরী যদি তাঁদের সংগে আসতে চান, তাতে কোনো আপত্তি নেই। সংগঠনের নেতারা চাইলে তাঁকে নতুন আমির হিসেবে মেনে নেবে। কিন্তু কমিটিতে কিছু সংস্কার আনতে হবে। কমিটির যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের জায়গায় নতুন করে অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর মামুনুল হকসহ হেফাজতের বিতর্কিত নেতাদেরও বাদ দেওয়া হবে কমিটি থেকে।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে নাশকতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতাসহ শতাধিক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নাশকতা মামলা এবং আল্লামা শফী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন শীর্ষ নেতারা। গ্রেপ্তার এড়াতে শীর্ষ নেতাদের অনেকে এখন আত্মগোপনে। চরম এ সংকটময় পরিস্থিতিতে ২৪ এপ্রিল রাতে হেফাজতের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন