জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদলের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১১টায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রেসক্লাবে প্রবেশ করেন। পরে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রেসক্লাবের মূল ফটক দিয়ে বাইরে বের হন।
এসময় পুলিশ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারাও পাল্টা ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা শুরু করে। জবাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশকে কয়েক দফা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।
প্রথম দফায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে বাইরে বের হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় নেতাকর্মীরা দৌঁড়ে কদম ফোয়ার দিকে চলে যান।
দ্বিতীয় দফায় প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটা শুরু করে। এসময় নেতাকর্মীরাও পুলিশকে পাল্টা ধাওয়া দেয়, ইটপাটকেল ছুড়ে।
পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে এসময় প্রায় শতাধিক ছাত্রদলের নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের ভেতরে অবস্থান নেয়। প্রেসক্লাবের ভেতর থেকেই তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ কিছুটা পিছু হটলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সামনে এগিয়ে আসেন। তখন পুলিশকে লক্ষ করে আরও ব্যাপকভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।
পরে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল মারেন। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুরানো পল্টনের দিকে ছুটতে থাকেন এবং কিছু কর্মী প্রেসক্লাবের ভেতরে আশ্রয় নেন।
পুলিশ ও ছাত্রদলের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খানসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও অনেক সদস্য আহত হন।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পুলিশ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়।
এসময় মিছিল থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়া, জিয়া খালেদা, তারেক রহমান, রহমান তারেকসহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রেসক্লাবে মুখরিত করে তুলেন।
এদিকে ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ সভা কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের জোড়ো হতে দেখা গেছে। প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রেসক্লাবে জোর হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ বলছে, ছাত্রদলকে সমাবেশের কোনও অনুমতি দেয়া হয়নি। এ সমাবেশ পূবঘোষিত ছিল না। পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রেসক্লাবে এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য কোনও ধরনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না।
এ বিষয়ে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান ব্রেকিংনিউজকে বলেছেন, ‘ঢাকা শহরের যেকোনও জায়গায় অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ করতে হলে ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। আজকে ছাত্রদল প্রোগ্রাম করার জন্য কোনও অনুমতি নেয়নি। তাদেরকে আমরা সকালে জানিয়েছি, আপনারা অনুমতি নিয়ে প্রোগ্রাম করেন। সেটি না করে প্রেসক্লাবের এক ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসে পুলিশের ওপর হামলা চালায় তারা, প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ইট-পাটকেলও মারলো। আমরা খেয়াল করেছি, প্রেসক্লাবের ভেতরে কোনও ইট নেই। তাহলে এত ইট আসলো কোত্থেকে? তার মানে তারা ইট সংগ্রহ করেছে এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এটার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুলিশ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন