ধীর গতিতে চলার কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ ৫ হত্যা মামলার বিচার ১৬ বছরেও কোন কুল-কিনারা হয়নি। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে তদন্ত কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে ১০ বছর। দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি এতোই কচ্ছপ গতিতে চলছে যে, গত এক বছরে সাক্ষ্য গ্রহনের সংখ্যা বাড়েনি একটিও। ফলে নিহত পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা।
সাবেক অর্থমন্ত্রীর ছেলে রেজা কিবরিয়া মনে করেন বর্তমান সরকারের আমলে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার হবে না।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সিআইডি’র তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্তের পর ২০০৫ সালের ২০ মার্চ ১০ জনের বিরুদ্ধে ১ম অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি দাবি করে, মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি খারিজ করলে ১৪ মে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরকারের প্রতি ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করেন। ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করেন।
এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে। ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামি করে এই আলোচিত মামলার অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চার্জশিটে লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। এতেও বাদি না রাজি দিলে পরবর্তী তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির এএসপি মেহেরুননেছা পারুল। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভূক্ত করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ৩য় সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করেন।
অন্তর্ভূক্ত নতুন আসামিরা হলেন- সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি তাজউদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ, হাফেজ ইয়াহিয়া। এরপর ২০১৫ সালের জুনে মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত মামলায় মোট ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলায়ও ২০২০ সনের ২২ অক্টোবর চার্জ গঠন করা হয়। ২৭ জানুয়ারী উভয় মামলায় সাক্ষ্য গ্রহনের তারিখ ধার্য রয়েছে। সূত্র মতে, এ মামলার মূল আসমীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে জঙ্গী হামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন জেলায় মামলা রয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন আদালতে হাজির করানোর জন্য এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করতে হয়। এমতাবস্থায় কিবরিয়া হত্যা মামলার ধার্য তারিখে সব সময় আদালতে হাজির সম্ভব হয় না। এতে মামলার বিচার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি সরোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ মামলার আসামীদের মধ্যে তিন জনের অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। এরা হচ্ছেন মুফতি আব্দুল হান্নান, শরীফ সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপন।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীসহ ৯ জন আসামী পলাতক রয়েছেন। এছাড়া এ মামলার আসামী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফ চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গৌছসহ জামিনে আছেন ৯ জন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক অর্থমন্ত্রীর সন্তান গনফোরামের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, বিচার নয়, আমরা ন্যয়বিচার চাই। একটি সীমিত তদন্তের ভিত্তিতে একটি মিথ্যা চার্জশীর্টকে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যাখান করছি। আওয়ামীলীগের আমলে ন্যায় বিচারের সম্ভাবনা দেখছি না। আমার মত দেশে আরো শত শত পরিবার অপেক্ষা আছে যদি কোন সময় সুবিচারের পরিস্থিতি হয়। আইন মন্ত্রী ও স্বারষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি, তদন্তে আমরা সন্তুষ্ট নই।
পিতার লাশ হবিগঞ্জে না আনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে এ হত্যকান্ডের পেছনে দায়ী এর ধারণা তখন ছিল না। আমি চাইনি বাবার খুনিরা লাশ নিয়ে রাজনীতি করুক।এতে তা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক হতো।
উল্লেখ্য যে, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ায়ী হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আওয়ামীলীগের এক জনসভা শেষে গ্রেনেড হামলায় কিবরিয়া ও তার ভাতিজা মঞ্জুরুল হুদাসহ ৫ নেতাকর্মী নিহত ও ৭০ জন আহত হন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক বর্তমান হবিগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন