নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী (বাঁয়ে) ও নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে রাজাকার পরিবারের সন্তান বলায় একরাম চৌধুরীর বহিষ্কার দাবিতে আবার হরতাল ডাকা হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।
ঘোষণা অনুযায়ী আগামী রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি চলবে। হরতাল চলাকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সব ধরনের যানবাহন ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বসুরহাটের রুপালী চত্বরে এক সভায় এ ঘোষণা দেন নবনির্বাচিত পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের মির্জা।
সভা শেষে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কটূক্তির পর দলীয় হাইকমান্ড কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে।
তিনি বলেন, নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর দল থেকে বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। নাকে নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এছাড়া নোয়াখালীর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিমকে অনেক শ্রদ্ধা করতাম, তিনি আজ মাতাল একরাম চৌধুরীর সুরে কথা বলেন। তিনি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন।
সমাবেশে এসময় উপস্থিত ছিলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বাবুল, বসুরহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আজম পাশা চৌধুরী রুমেল প্রমুখ।
কাদের মির্জা বলেন, আমি একরাম চৌধুরীকে বলব, আপনি অস্ত্রবাজি বন্ধ করেন, আমরা অস্ত্রবাজির রাজনীতি করি না। আজকে নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় একরাম চৌধুরীর লোক অস্ত্রবাজি করছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ওবায়দুল কাদেরকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে নোয়াখালীতে হাজার হাজার ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমাবেশের ডাক দিয়েছে। কর্মসূচির আগে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে, বাড়ি বাড়ি সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালিয়েছে। আহতরা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
তিনি ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার লোকজন হাসপাতালে আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, আর আপনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুনতে খারাপ লাগছে, জেলের ভয় দেখাবেন না, আপনার চেয়েও বেশি জেল খেটেছি, আপনি আমাদের আদর্শ, আপনি আমাদের গর্ব, আপনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে, আমরা শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব, এরপর কোম্পানীগঞ্জের মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধা করবে না, আপনার কথা শুনবে না। একরাম চৌধুরীর পতন না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জের জনগণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আমেরিকাতেও ভোটের কারচুপি হয়, বসুরহাট পৌরসভায় নৌকা জয়লাভ করেছে, আপনি ভাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কিন্তু ভোটারদের অভিনন্দন জানাননি, অভিনন্দন জানান, জয়নাল হাজারী, আলাউদ্দিন নাসিম, গাজীপুরের মেয়র, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নাঈম নিজাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি রোববার কোম্পানীগঞ্জে হরতাল। এ হরতালে গাড়ি, দোকানপাটসহ সব বন্ধ থাকবে। একটি পাখিও উড়তে পারবে না। এরপর ঢাকাভিত্তিক কর্মসূচি দেওয়া হবে, সে কর্মসূচিতে দেশের এমপি, মেয়র, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা উপস্থিত থাকবেন। আজ ঢাকায় মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক উপস্থিত থাকার কথা ছিল, ওবায়দুল কাদের সাহেব বন্ধ করে দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক সাহেব শাসন করতে শিখেছেন, আদর করতে শেখেননি।
এর আগে একই দাবিতে (২৪ জানুয়ারি) আধাবেলা হরতালের ডাক দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। তখন আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুরোধে রোববারের হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) রাতে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ‘রাজাকার পরিবারের সন্তান’ বলে আখ্যায়িত করেন। কয়েক দিনের মধ্যে এসব নিয়ে কথা বলা শুরু করবেন বলে হুমকি দেন তিনি।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন