বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরোধিতা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা কখনো সহ্য করা হবে না। বঙ্গবন্ধুর দেশে তার ভাস্কর্য হবেই, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মব্যবসায়ী কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা উচ্ছেদের হুমকির প্রতিবাদে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ’৭১। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ ( বাংলাদেশ শাখা)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালে এই মৌলবাদীরা বলেছিলেন, বাংলা হিন্দুদের ভাষা। এখন তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন। অথচ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রয়েছে। শিগগিরই দোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এ উপমহাদেশে আলেমধারী কিছু ভণ্ড আছে। যারা এক সময় ইংরেজি ভাষাকে হারাম বলে মুসলমানদের পিছিয়ে দিয়েছিলেন। একাত্তরেও কিছু ভাড়াটিয়া আলেম ফতোয়া দিলেন, পাকিস্তান ভাঙলে ইসলাম ভেঙে যাবে। আজকে আবার ফতোয়া দেয়া হলো, ভাস্কর্য নাজায়েজ।’
‘আমি বাবুনগরীদের কাছে বিনয়ের সাথে প্রশ্ন রাখতে রাখতে চাই, আপনারা আগের ফতোয়াবাজধারীদের মতো। আমার ধারণা আপনারা তাদেরই উত্তরসূরি। আপনারা ধর্মকে সামাজিক কাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চান। ধর্মকে পুঁজি করে মানুষকে বিভ্রাম্ত করতে চান।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা একাত্তরে অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দিইনি। আপনারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলবেন আমরা কি আপনাদের চুমু দেব? না বুঝে ভাস্কর্য নিয়ে বলে থাকলে ক্ষমা চান, আর যদি জেনেশুনে বলে থাকেন তাহলে পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকেন।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘ভাস্কর্য তো আপনাদের শানের পাকিস্তানেও আছে। অধিকাংশ মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে। আমি হালাল-হারামের কথায় বাদই দিলাম। আমার প্রশ্ন, সব মুসলিম দেশে যদি ভাস্কর্য থেকে থাকে তাহলে বাংলাদেশে থাকতে দোষ কী?’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে প্রয়োজনে বুকের ঢেলে দেব। তবুও ওই ভণ্ড ফতোয়াবাজদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড হাসিল করতে দেব না। এই দোলাইপাড়েই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, এদেশে থাকতে হলে বঙ্গবন্ধুকে মেনে থাকতে হবে। তার ভাস্কর্য এদেশের মোড়ে মোড়ে হবে। এটা তোমাদের মেনে নিতে হবে।
মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা বলেছো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবা। কিন্তু সে কাজ করতে আসলে এদেশের মুক্তিকামী মানুষ তোমাদের বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিবে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাবু নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, একাত্তরের বিরোধিতাকারীরা, পঁচাত্তরের ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধীতা করছে। এ প্রেক্ষিতে গৌরব’ ৭১ প্রতিবাদী এই মহাসমাবেশ আয়োজন করেছে। আমরা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ এতে সংহতি প্রকাশ করছি।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, শকুনরা আবার জেগে উঠেছে। তারা আবার জাতীয় পতাকাকে আঘাত করতে চায়। আর বসে থাকার সময় নাই। এখনই প্রতিবাদের ঝড় বইয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে জাতীয় পতাকা। কাজেই বঙ্গবন্ধুর অবমাননা সহ্য করা হবে না। মামুনুল হককে সারাদেশের কোথাও নামতে দেবো না। যেখানে পাবো সেখানে তাকে প্রতিহত করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইবুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে আপোষ হবে না। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পতাকা। ইসলাম, কুরআন মৌলবাদীদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমরা ও ইসলাম জানি, কুরআন আমরাও পড়ি। শরীয়তের প্রশ্ন তুলবেন না, শরীয়ত আমরাও জানি।
গৌরব ৭১ এর সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, শহীদ সন্তান নুজহাত চৌধুরী শম্পা, শমী কায়সার, ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রোজারিও, আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখ।
এছাড়া গৌরব ৭১ এর সহ সভাপতি হাবিবুর রহমান রোমেল, শেখ রাসেল ( ইউএস ইঙ্ক) এর রবিউল ইসলাম রূপম, আওয়ামী নেতা নেহেরীন মোস্তফা দিশি, ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ঢাকা -৪ ও ৫ এর সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরবৃন্দ, ঢাকা-৪ এর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন