হেফাজতে ইসলাম পুনর্গঠিত হয়ে মূলধারায় ফেরার পরপরই আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে ফের দানবীয় হুঙ্কার দিচ্ছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। শেখ হাসিনা বা সরকারের মন্ত্রীরা চুপ থাকলেও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের লেলিয়ে দিয়েছেন হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের হুঙ্কারের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকেও পাল্টা জবাব দেওয়া হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপন কেন্ত্র করেই মূলত হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগ এখন মুখোমুখি অবস্থান। জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ দেশব্যাপি শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থপানের কর্মসূচি নেয়। এরপরই পুনর্গঠিত হেফাজতে ইসলামসহ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে মূর্তি বিরোধী মিছিল বের হলে লাঠি চার্জ করেছে পুলিশ। এছাড়া চট্রগ্রামের একটি তাফসিরুল কোলআন মাহফিলে আল্লামা মামুনুল হককে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ শুক্রবার সকাল থেকে হাটহাজারিতে রাস্তা অবরোধ এবং অগ্নিসংযোগ করে। ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগ ভাংচুর, এবং অগ্নিসংযোগের রাজনীতি করছে এখন হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে। হেফাজতের নেতাদের বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি’র একদিনের মধ্যেই চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ মামুনুল হককে কেন্দ্র করে অবরোধ, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগে নেমেছে। ঢাকায় পুলিশের অ্যাকশন ও চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অগ্নিসংযোগে প্রমান করে হেফাজতের বিরুদ্ধে দানবীয় রূপ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
অপরদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ঘাড় মটকে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এর আগে গত ৭ নভেম্বর সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্যপরিষদের চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের হুমকিও দেয়া হয়েছিল। এই সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সমাবেশ থেকে হেফাজত নেতাদের ধরে জবাই করার শ্লোগানও দেওয়া হয়। এরপরই হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্যামা পূজা উপলক্ষে বন্দর নগরীর গোল পাহাড় কালী মন্দিরে গিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে ঘাড় মটকে দেয়ার হুমকি দেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের এই সংসদ সদস্য। নওফেলের এমন আগ্রাসী হুমকির পর ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে চরম বিষোদ্গার করেছেন। হেফাজতের নেতা আল্লামা মামুনুল হক সহ আলেমদেরকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন তারা।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত চেতনার নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জোরালো প্রতিবাদ উঠেছে। এই প্রতিবাদ বিক্ষোভে হেফাজতে ইসলামসহ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠি স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপনের নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে ইতোমধ্যে। অন্যদিকে এই মূর্তিকে কেন্দ্র করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মূর্তিপূজার বিজাতীয় সংস্কৃতি শুরু করেছে আওয়ামী সরকার।
বৃহস্পতিবার আল্লামা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য ও আচরণ মনে করিয়ে দেয় ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের কথা। জনশ্রুতি রয়েছে প্রশাসনের পোশাকে অস্ত্র হাতে নিয়ে সেদিন গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিলো ছাত্রলীগ। লেখক ভট্টাচার্যদের হুমকিকে মনে হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সেই ধরণের গণহত্যার প্রস্তুতি আবারো নিচ্ছেন তারা।
তবে, এবার ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বা তার সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা হেফাজতের ইসলামের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করছেন না। তাদের হয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ঘাড় মটকে দেয়া, বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন অন্য নেতারা। তারা প্রাথমিক টার্গেট করেছেন হেফাজতের নেতা আল্লামা মামুনুল হকসহ মূর্তি স্থাপনে প্রতিবাদী আলেমদের। একের পর এক কদর্য ভাষায় তারা আক্রমণ করে যাচ্ছেন মূর্তির প্রতিবাদকারীদের। কার্যত এ ধরনের হুঙ্কারের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামসহ মূর্তি বিরোধী সবাইকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছেন ভারতের মদদপুষ্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ।
হেফাজতে ইসলামের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আল্লামা মামুনুল হকের কিছু হলে এবার সত্যিই একটা সফল শাপলা কায়েম করে দেখাবে হেফাজত কর্মীরা। এবার ওলামায়ে কেরামের ওপর আঘাত আসলে জীবন বিলিয়ে দেয়ার শপথে বলীয়ান কর্মীরা সব কিছুই করতে পারেন। হেফাজতে ইসলামের মূর্তিবিরোধী অবস্থানের কারণে দলমত নির্বিশেষে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আবারো তাদের সমর্থনে সমবেত হচ্ছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন