আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন,‘মৌলবাদিরা সীমা লঙ্ঘন করছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে মৌলবাদিদের বিরোধিতা প্রসঙ্গে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জাহাঙ্গীর কবির নানক একথা বলেন।
তিনি বলেন,‘সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধর্মীয় মাতম করছে, যারা সব সময় বাংলাদেশের ক্ষতিচায়। এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সব সময় প্রগতিশীল বাংলাদেশের বিপক্ষে কাজ করেছে। তাদের চিন্তা-চেতনা বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই জ্ঞানপাপীরা চোঁখ থাকতেও অন্ধ। তার কারণ হলো তারা জানে না যে, বিশ্বে বহু মুসলিম দেশে এ ধরনের ভাস্কর্য রয়েছে। সেসব মুসলিম দেশে খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য স্থাপন এবং সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু তারপরও বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে তারা উগ্রসাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কোন ইস্যু না পেয়ে তারা ভাস্কর্য ইস্যুকে ইস্যু হিসেবে তৈরি করছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রিয় মানুষদেরকে আঘাত করছে। তারা একচেটিয়াভাবে যে কথাগুলো বলে যাচ্ছে, তারা সীমার বাইরে কথাবার্তা বলে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক আরো বলেন,‘সীমা লঙ্ঘনকারিকে আল্লাহ পছন্দ করে না, তেমনি মানুষও পছন্দ করে না। কিন্তু মৌলবাদিরা সীমা লঙ্ঘন করছে। এই গোষ্ঠী চেষ্টা করেছে স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের ক্ষতি করার। এসব ধর্মান্ধ গোষ্ঠীদের অন্যকোন অসৎ-অশুভ উদ্যেশ্যে রয়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে। বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য বহু চেষ্টা করেছে।’
আপনার দৃষ্টিতে এর পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন বা অন্যকোন অসৎ উদ্যেশ্য রয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে, এই রাজনৈতিক বলেন,‘অবশ্যই এর সঙ্গে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। যখনই কুচক্রি মহল কোন ইস্যু খুঁজে পায় না এবং তখনই নন ইস্যুকে সামনে এনে ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করে একটি অন্ধকার সময়কে সামনে আনার চেষ্টা করে। তবে এসব অশুভ উদ্দেশ্য বারবার ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে, এখনো চেষ্টা চালালে তা ব্যাহত করে দেয়া হবে।’
আমরা দেখছি যে, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঔদ্ধত্যের তেমন কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি এটা কেন? উত্তরে নানক বলেন,‘আমরা এখন পর্যন্ত এই বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখছি, অবজারভেশন করছি, তারা কি করতে চায়, কি বলতে চায়, তারা আর কতদূর বাড়তে চায়। আমরা শুধু এটুকু লক্ষ্য করছি। আমি বরিশালের চরমোনাই নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের মতামত নেয়ার চেষ্টা করছি। তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে আপনি কিআশ্বস্ত করতে পারেন যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবেই? আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন,‘এখানে কম্প্রোমাইজ করার কোন সুযোগ নাই, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বাংলাদেশে হবেই । এই নিয়ে যদি কেউ পানি ঘোলা করতে চায় তাদেরকে আমরা দেখিয়ে দেবো যে, পৃথিবীর কোন কোন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা প্রচারণায় যাব। যারা ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিচ্ছেন, ভাস্কর্যকে যারা মূর্তি বলছেন, তারা আসলে মূর্তি ও ভাস্কর্যর পার্থক্য বোঝে না। কাজেই তাদের কে শেখাতে হবে তাদেরকে, বুঝাতে হবে যে মূর্তি এবং ভাস্কর্য একনা। আমরা সেই কাজটি করছি, তারপর না বুঝতে চাইলে তাদের উদ্দেশ্য যদি অসৎ উদ্দেশ্যে হয় তাহলে আমাদেরকে বাঁকা পথে যেতে হবে।’
পাঠক মন্তব্য
অনেকে মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান যা কোনোভাবেই সঠিক নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য উভয়ই পরিত্যাজ্য। কুরআন মজিদে এ প্রসঙ্গে যে আয়াতসমূহ রয়েছে তা মূর্তি ও ভাস্কর্য উভয়কেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদের স্পষ্ট নির্দেশ- ‘তোমরা পরিহার করো অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার করো মিথ্যাকথন।’ (সূরা হজ-৩০) এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে সব ধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সব কর্মকাণ্ড বর্জন করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন