করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। করোনা সংকটের সাত মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখনো উপদেষ্টাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। দুই একজন উপদেষ্টা বিভিন্ন সাক্ষাৎকার বা ছোটখাটো অনুষ্ঠানে বক্তব্য বিবৃতি রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে তাদের মূল কার্যক্রম, সে মুল কার্যক্রমে তাদেরকে খুব একটা সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। উপদেষ্টাদের এই ভূমিকাহীনতার ফলেই আমলাতন্ত্র জাঁকিয়ে বসেছে বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। বিপুল বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সেই সরকারের একটা অন্যতম আকর্ষণ ছিল উপদেষ্টামন্ডলী। সে সময়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর ক্ষমতা ছিল অত্যন্ত বেশি। প্রথমদিকে উপদেষ্টামণ্ডলীর উপদেষ্টারা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন । এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও কথা হয়েছিল । জাতীয় সংসদ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, উপদেষ্টারা যেহেতু গোপনীয়তার শপথ নেন না, কাজেই তাদের মন্ত্রিসভার বৈঠকে থাকা কতটা সমীচীন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই জাতীয় সংসদে এটি উপস্থাপন করা হয়েছিল। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপদেষ্টাদের অংশগ্রহণ সীমিত করা হয়েছিল । তার পরও এইচটি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, আলাউদ্দিন আহমেদ এবং সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর মতো উপদেষ্টারা অত্যন্ত দাপটের সঙ্গেই সরকারের নীতিনির্ধারক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। ড. গওহর রিজভী কিছুদিন পরে উপদেষ্টা হন এবং তিনি খুব দ্রুতই পাদপ্রদীপে চলে এসেছিলেন।
কিন্তু ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় যখন ক্ষমতায় আসে। তখন মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয় আমির হোসেন আমু , তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিমের মত নেতাদের। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণেই উপদেষ্টামণ্ডলীর ভূমিকা সংকুচিত হয়ে পড়ে । এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপদেষ্টামন্ডলীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। এইচ টি ইমামকে জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা থেকে সরিয়ে রাজনৈতিক উপদেষ্টা নেয়া হয়। আলাউদ্দিন এবং সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী দ্বিতীয় মেয়াদে উপদেষ্টা পদে থাকেননি। সেই সময় থেকেই বাকি উপদেষ্টাদের ক্ষমতা সংকুচিত হওয়া শুরু হয়। তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে, শুধুমাত্র তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে সরিয়ে দেয়া হয় । বাকী উপদেষ্টারা যথারীতি একই পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও বেসরকারি শিল্পখাতের উপদেষ্টা হিসেবে সালমান এফ রহমান কে অবৈতনিক ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
কিন্তু এ সময় উপদেষ্টাদের ভূমিকা বাড়েনি। যদিও এই তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের অনেক নবীন এবং অভিজ্ঞতা কমসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তারপরও উপদেষ্টাদের ভূমিকা অনেক সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। গত মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ শুরু থেকেই উপদেষ্টাদের ভূমিকা একেবারেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। ইদানিং উপদেষ্টারা টুকটাক কিছু বক্তব্য রাখলেও সরকারের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা নেই বললেই চলে।
অনেকেই মনে করেন উপদেষ্টারা যেহেতু বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত এবং করোনার জন্যও তারা ঘর বন্দী রয়েছেন। সেজন্য তাদের ভূমিকা কম রয়েছে। আবার অনেকেই মনে করেন উপদেষ্টার যে ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং তাৎপর্য, সেটি গত ১২ বছরে তেমন ভাবে রাখতে পারেননি। বরং উপদেষ্টাদের প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত এবং প্রত্যেক পূর্ণতায় সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এরকম বাস্তবতায় এখন উপদেষ্টাদের ভূমিকা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদ সরকারের নীতিনির্ধারণী এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখতে পারতো। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মন্ডলী একটি আলংকারিক পথ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন