জামানত হারানো দুই প্রার্থী, রেজাউল ও সালাউদ্দিন
প্রার্থীরা জামানতসহ ঘরে ফিরতে না পারলেও ফ্যাসিবাদের অধীনে তামাসার উপ-নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহন অব্যাহত রয়েছে। উপ-নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের দিন বর্জন অথবা পুনরায় নির্বাচন দাবী জানানো যেন দলটির নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। সর্বশেষ গতকাল (১৭ অক্টোবর) ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচনেও একই পরিণতি হয়েছে। দুই আসনেই জামানত হারিয়েছেন বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থীরা। তামাসার নির্বাচনে জামানত হারিয়ে একই নির্বাচন কমিশনের কাছে আবার পুনরায় ভোট দাবী করেছেনর তারা। গতকাল দুপুরের পরই ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমদ পুনরায় নির্বাচনের দাবী জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজেই দাবী করেছেন ভোটার বিহীন নির্বাচন হচ্ছে। কেন্দ্রে ভোটাররা যায়নি। এর মাঝেই তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। একই দাবী জানিয়েছেন নওগাঁ-৬ আসনের বিএনপি প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম। এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পাবনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনীত বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবও একই অভিযোগ করেছিলেন। তিনিও ভোটের দিন বলেছিলেন, ভোটাররা কেন্দ্রে যায়নি। তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে, সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোট দিচ্ছে, এই অভিযোগ করে হাবিবুর রহমান হাবিবও সেদিন দুপুরে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে পুনরায় ভোট দাবী করেছিলেন। এর আগে আরো কয়েকটি উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি প্রার্থীরা ভোটের দিন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে একই নির্বাচন কমিশনের কাছে পুনরায় ভোট দাবী করেন।
গতকালের উপ-নির্বাচনে নওগা-৬ আসনে পরাজিত প্রাথী রেজাউল ইসলাম পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১৭ ভোট। ঢাকা-৫ আসনে সালাউদ্দিন আহমদ পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৯২৬ ভোট। গত ৩ সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত পাবনা উপ-নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব জামানত হারিয়েছেন।
জামানত হারানো এই প্রার্থীদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, সাধারণ মানুষ বা দলীয় সমর্থকরাও ভোট দিতে যায় না। কারণ তারাও জানেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে শুধু তামাসার আয়োজন করা হয়। ভোট দিলেও কোন লাভ হবে না। কেন্দ্রে গেলে ভোট দেয়ার সুযোগও পাওয়া যাবে না। তাই সাধারণ মানুষ নিজে থেকেই কেন্দ্রে না গিয়ে ভোটকে নীরবে বর্জন করছেন। কিন্তু বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনার সরকারকে ফ্যাসিবাদী বললেও তামাসার নির্বাচনে ঠিকই অংশ গ্রহন করছে এবং নির্বাচনের নামে এই তামাসাকে এক প্রকার বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে গত ৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন- উপনির্বাচন আর একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারচুপির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আগের রাতেই ব্যালটে সীল মারা হয়ে গিয়েছিল, আর এখন উপনির্বাচনগুলোতে কোনো ভোটই হয় না, শুধু ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তারপরও আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। কারণ, আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা বিশ্বাস করি সরকারের পরিবর্তনের একটাই পথ তা হল নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক ন্যূনতম স্পেস যতটুকু পাওয়া যায় সে জায়গাগুলো আমাদের ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিএনপি মহাসচিব আরো একটি কথা বরাবরই বলে থাকেন, বিএনপি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নয়। বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে।
অথচ, এই বিএনপিই ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের পরাজয়ের পর ঘোষণা করেছিল, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে গঠিত সরকারের অধীনে ভবিষ্যতে আর কোন নির্বাচনে দলটি অংশ নেবে না। ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর ২০১৯ সালের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের মূল সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ((ইসি) অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আরো বলা হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহ থেকে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে কোনো প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তাঁকে দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে দলটির পক্ষ থেকে কোন প্রার্থীতা অনুমোদন করা হয়নি। এমনকি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিস্কারও করা হয় তখন। যদিও এই সিদ্ধান্তে বেশিদিন অটল থাকা দলটির পক্ষে সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাচনের শেষ দু’টি ধাপেই আবার প্রার্থী মনোনয়ন দেয় বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে এই উপ-নির্বাচন গুলোতে অংশ নিয়ে বিএনপি শেখ হাসিনার অপশাসন এবং ভোট ডাকাতিকেই কেবল বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে। দলটির মহাসচিবের ভাষায় ন্যুনতম স্পেস এবং উদার গণতান্ত্রিক দল হিসাবে তামাসার নির্বাচনে অংশ গ্রহনের যে অজুহাত দেয়া হচ্ছে সেটাকে নিজেদের দুর্বলতা এবং দায় এড়ানোর জন্যই বলা হয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখের আগের রাতেই ব্যালটে সীল মেরে আওয়ামী লীগ নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করে নেয়। ৩০ ডিসেম্বর দিনের শেষে শুধু আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করে শেখ হাসিনার অধিনস্থ নির্বাচন কমিশন। ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া আসন গুলোতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। উপ-নির্বাচন গুলোতেও নুরুল হুদা কমিশন শেখ হাসিনার নির্দেশ মত নির্বাচনের নামে তামাসা করে যাচ্ছেন। ভোটাররা ভোট দিতে না গেলেও নির্বাচন কমিশন একটি মনগড়া ফলাফল প্রকাশ করে যাচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন