ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলায় ১৮ আসামির বিরুদ্ধে প্রায় দুই বছর আগে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের পর আজও কোনো সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। সাক্ষী না আসায় আলোচিত হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম থমকে গেছে।
আলোচিত মামলাটি ঢাকার ৫নং অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত নয়টি ধার্য তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু এসব তারিখে আদালতে কোনো সাক্ষী উপস্থিত হননি। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত। আগামী ৪ অক্টোবর মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন। কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। আদালত থেকে সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’
‘আমরা সাক্ষীদের আদালতে হাজিরের চেষ্টা করছি। আশা করছি, সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে সাক্ষ্য নিয়ে মামলাটির বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে পারব।’
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই বিপণিবিতানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওচিত্র দেখে মিল্কির একসময়ের সহযোগী যুবলীগের আরেক নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ ভাড়াটে খুনিরা তাকে হত্যা করে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় এজাহারনামীয় ১১ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক কাজেমুর রশিদ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সিসিটিভি ফুটেজে মিল্কি হত্যা
তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে মূল আসামিদের নাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ না করার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৯ জুন মামলার বাদী ও নিহত মিল্কির ভাই রাশেদ হক খান মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়ার আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত ২০১৪ সালের ১৭ জুন আবেদন মঞ্জুর করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (সিআইডি) উত্তম কুমার বিশ্বাস অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আগের অভিযোগপত্রে ১১ আসামির সঙ্গে আরও সাতজনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল এবং নয়জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৭৫ জনকে।
২০১৬ সালের ১৪ মে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেন। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার ৫নং অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ১৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪/১০৯/২১২/১২০ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।
১৮ আসামি হলেন- সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ।
তাদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু ও সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী পলাতক রয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন