কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার গ্রামের আব্দুল করিম মিয়া। তার অভিযোগ,‘হামরা এমপিকে সবসময় টকশোতে দেখি, এলাকায় দেখি না।’
আব্দুল করিমের মতো সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশিমবাজারের তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার অর্ধশত মানুষ জাগো নিউজের কাছে এমন অভিযোগ করেন।
তবে গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানালেন, তিস্তা নদীর ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দফতরে কথা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
১৭ সেপ্টেম্বর তিস্তার করাল গ্রাসে কাশিমবাজার যেন নতুন ‘ছিটমহল’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন ও ভিডিও প্রকাশের পর ভাঙন কবলিত সাধারণ জনগণ ফুসে উঠেছে। সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্যের প্রতি তাদের অভিযোগ আর অভিমানের কথা এখন বেরিয়ে আসছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ভাঙন কবলিতদের পাশে দাঁড়াননি। নেননি ভাঙন প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার এলাকায় গত দুই মাসে তিস্তা নদীর ভাঙনে চার শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। হুমকিতে আছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াফদা বাঁধ। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিমাবাদ বি-এল উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিমাবাদ দাখিল মাদরাসা ও ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এখন হুমকির মুখে। তিস্তা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব মানুষগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এমন দুর্দিনে কেউ আসেনি খোঁজ নিতে।
হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার গ্রামের বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেক কষ্টে আছি। গত নির্বাচনে আমাদের নাজিরাবাদ স্কুলমাঠে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কথা তিনি রাখেননি। নির্বাচনের পর আর খোঁজ নেননি।
হরিপুর ইউনিয়নের পাড়াসাধুয়া গ্রামের রঞ্জু মিয়া জানান, আমরা এমপিকে টকশোতে দেখি। বড় বড় কথা বলেন। ওনার কথায় মনে হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষ শান্তিতে আছে। কিন্তু আমরা যে কত কষ্টে আছি বোঝাতে পারব না।
তিনি বলেন, এমপি মহাদয় বলেছিলেন যেকোনো মূল্যে হোক কাশিমবাজার এলাকার মসজিদটি রক্ষা করা হবে। মাসজিদটি এখন নদীতে বিলীন। আপনি কী করলেন? এখন আমরা মানবেতন জীবন কাটাচ্ছি আপনি খোঁজও নিচ্ছেন না। হয় আমাদের সহযোগিতা দিন না হয় আমাদেরকে নদীতে ভাসিয়ে দিন। ধুকে ধুকে মরার চেয়ে একবারে মরাই ভালো।
স্থানীয় মাদারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, নদীভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ বি-এল উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ দাখিল মাদরাসা ও কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হবে। তাই সরকারসহ জন-প্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
জনগণের অভিযোগের বিষয়ে গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি কয়েকবার কাশিমবাজারে গেছি। সেখানে একটি মসজিদের জন্য ১০ লাখ টাকাও দিয়েছি। রাস্তার জন্য টাকা দিয়েছি। আরও ৬টি মসজিদের জন্য টাকা দিয়েছি। তবে ভাঙন ঠেকাতে পারছি না। ওই জায়গাটি উলিপুর-কাশিমবাজার বর্ডার এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কাল-পরশু ডিজির সঙ্গে কথা বলব। আশা করি বস্তা ফেলবে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর কাশিমবাজার সরেজমিনে যাব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন