কুয়েতে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগের তদন্তের পর মুদ্রা পাচারের অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির সিআইডি। সে মোতাবেক তাকে নিয়ে অভিযানে নামে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। অভিযানে পাপুলের চেক বই জব্দ করা হয়েছে। তাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে।
কুয়েতের কূটনীতিক ও ব্যবসায়িক সূত্রগুলো জানিয়েছে, কুয়েতে সিআইডির কর্মকর্তারা গত বুধবার মূর্তজা মামুন নামে কাজী শহীদের এক বিশ্বস্ত কর্মচারীকে আটক করেন। এরপর পাপুলের ব্যাংক হিসাব থেকে লেনদেনের বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
কুয়েতের আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতের গোয়েন্দাদের কাছে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া বাংলাদেশের ১১ জন নাগরিক তার সহযোগী মূর্তজা মামুনের নাম উল্লেখ করেন। আদালত এমপির এই সহযোগীকে আটকের নির্দেশ দেন। তাকে আটকের পর থেকে এমপি পাপুলের ব্যাংকসহ কুয়েতের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গোয়েন্দারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
গত বুধবার মূর্তজা মামুনকে আটকের পর তাকে সিআইডির দপ্তরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে পাপুলের বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পান গোয়েন্দারা। ওই দিনই আদালত মূতর্জা মামুনকে সিআইডির রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সিআইডির কর্মকর্তারা কাজী শহীদকে নিয়ে মুশরিক এলাকায় অবস্থিত তার বাসার কার পার্কিংয়ে যান। সেখানে তার একটি গাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই উদ্ধার করা হয়। ওই চেকবইগুলো থেকে গত তিন মাসে কুয়েতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার কুয়েতে আটক হোন এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। আটকের গত রোববার তার জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত তাকে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সিআইডির রিমান্ডে পাঠায়। তার রিমান্ডের মেয়াদকাল রোববার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এরই মধ্যে সিআইডি এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। ওই ১১ জনের সবাই এমপির বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি প্রতিবছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনেন।
এমপি কাজী শহীদের প্রতিষ্ঠান মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মূর্তজা মামুন কানাডার নাগরিক। মূর্তজা মামুন আটক পাপুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত এবং তিনি কাজী শহীদের লেনদেনের হিসাব রাখতেন বলে জানিয়েছে কুয়েতের স্থানীয় সূত্রগুলো।
কুয়েতে আটক এমপি পাপুলের সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই। মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয় দেখছি। কুয়েতের কাছ থেকে সরকারিভাবে এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। কুয়েত থেকে আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন, কুয়েতের সরকারের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। যেহেতু কুয়েতে এখন বন্ধ চলছে, তাই তিনি এ বিষয়ে চিঠির কোনো জবাব পাননি।’
কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, কুয়েত সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি কাজী শহীদকে তাদের হেফাজতে রেখেছে। গত শনিবারের পর থেকে একাধিকবার তার জামিনের চেষ্টা হয়েছিল। তবে জামিন হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন